Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

প্যাকেজিং পণ্য এনে ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি

Googleplus Pint
#1
রপ্তানি উৎসাহিত করতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় (বন্ড সুবিধা) প্যাকেজিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করতে দেওয়া হয়, যার যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে দেদার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। শুধু এক অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে, বন্ড সুবিধায় প্যাকেজিং সামগ্রী এসেছে এর চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। এমন কাণ্ড করে খুলনার আটটি ছাপাখানা ৫০০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে, যা আদায়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে।

মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে ২৯ হাজার ৫৫১ মেট্রিক টন। আর একই অর্থবছরে এই চিংড়ি প্যাকেজিং করতে পণ্যসামগ্রী আমদানি হয়েছে ৯২ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন।

বন্ড সুবিধায় আমদানি করে প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু শুল্ক ফাঁকি দিয়ে লাভ করেনি, লাভ করেছে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া আমদানি করা সামগ্রী খোলাবাজারে বিক্রি করেও, যা একেবারে আইনবিরুদ্ধ। ঘটনাটি মংলা কাস্টম হাউসের বন্ডেড ওয়্যারহাউসের (শুল্কমুক্ত পণ্যের গুদাম)। এখানে একটি শক্তিশালী চক্র বেপরোয়াভাবে শত শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিজেরা বছরের পর বছর আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

মংলা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ছয়টি ছাপাখানার বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এনে তা পরিশোধের দাবি করেছে। এগুলো হচ্ছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ২৯৪ কোটি ২০ লাখ ৬৪৫ টাকা, বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টা. লিমিটেড ৬৯ কোটি ৩১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৬ টাকা, শরীফা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ২৩ কোটি ৯০ লাখ ৪২ হাজার ৫৯৬ টাকা, সাউথ এশিয়ান প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ২৪ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ টাকা, মৌলি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড দুই কোটি ৮৮ লাখ ১৭ হাজার ৮৯৬ টাকা এবং বেঙ্গল প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড এক কোটি ৫৯ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪ টাকা। এ ছাড়া সাউথওয়েস্ট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং র্যাপিড প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান দুটির শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি এখনো নিরীক্ষাধীন।

মংলা কাস্টম কর্তৃপক্ষের উপকমিশনার স্বাক্ষরিত এমনই একটি দাবিপত্র বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টা. লিমিটেড বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, বন্ড লাইসেন্স পরিদর্শনকালে গুদামে ১৫ হাজার ৩৪৮ দশমিক ৬৪৮ মেট্রিক টন কাঁচামাল কম পাওয়া যায়। এতে বলা যায়, ওই কাঁচামাল অবৈধভাবে অন্য জায়গায় সরানো হয়েছে। অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলা এই কাঁচামালের শুল্ক ১৮৭ কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৩ দশমিক পাঁচ টাকা এবং জড়িত শুল্ক-কর ৬৮ কোটি ৩১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৮ টাকা, যা আদায়যোগ্য। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্ন অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে; যেমন—এককালীন বন্ডিং ক্যাপাসিটির অতিরিক্ত কাঁচামাল মজুদ রাখা। বলা হয়, বন্ড সংরক্ষণ এবং বন্ড-সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুসরণ না করে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের আবেদন করে লাইসেন্স গ্রহণকারী অবশ্যপালনীয় শর্তাবলি ভঙ্গ করেছে। বন্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে লিয়েন ব্যাংক হিসাবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, মতিঝিল শাখা, ঢাকাকে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিধি-বিধান ভঙ্গ করা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুল্ক-কর বাবদ মোট ৬৮ কোটি ৩১ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯ টাকা আদায়ের জন্য কেন দাবিনামা জারি করা হবে না, সে বিষয়ে ৩ জানুয়ারির মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়। কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব ও ব্যক্তিগত শুনানিতে দেওয়া বক্তব্য আইনসম্মত ও সন্তোষজনক না হওয়ায় কাস্টমস অ্যাক্ট অনুযায়ী দাবিনামা জারি করা হলো। এই দাবিনামা জারির ১০ দিনের মধ্যে দাবি করা অর্থ সরকারি কোষাগারে যথাযথ খাতে জমা দিয়ে ট্রেজারি চালানের মূল কপি তার দপ্তরে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টা. লিমিটেড দুটি প্রতিষ্ঠানই লকপুর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে চার শ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুল্ক কর্তৃপক্ষের দাবিনামা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। বলেন, এ ব্যাপারে তাঁদের একাধিক আপিল ও মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলায় তাঁরা জয়লাভও করেছেন। আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ গৃহীত হবে।

বেঙ্গল প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের এস এম আজিজুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা কোনো ধরনের শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে একই পরিমাণ পণ্য আমদানি করছেন। তবে বলেন, তাদের কেউ না কেউ শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে।

শরীফা প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রা. লিমিটেড ও সাউথ এশিয়ান প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান টিটোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি শুল্ক কর্তৃপক্ষের প্রায় ৫০ কোটি টাকা দাবিনামা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। ২৯ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি করতে প্রায় এক লাখ প্যাকেজিং পণ্যের কেন প্রয়োজন, জানতে চাইলে তিনি জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান দুটি খুলনাসহ সারা দেশে মাছ রপ্তানির জন্য প্যাকেজিং পণ্য সরবরাহ করে থাকে। তিনি নিজে প্রভাবশালী নন দাবি করে বলেন, হঠাত্ এসে যারা রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে, তারাই এসব কাজের সঙ্গে জড়িত।

প্রসঙ্গত, শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডকে শুল্ক ফাঁকির ২৭২ কোটি টাকা দ্রুত সরকারি কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় ছয় মাস হলেও এই টাকা এখনো জমা পড়েনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট খুলনার রূপসায় অবস্থিত খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসেন আহমেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম অভিযান চালায়। এ সময় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তদন্ত টিমকে সহযোগিতা না করে এই অভিযানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দাখিল করা হয়। ফলে তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৫ দিন পর আবারও অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় তদন্তদল এই প্রতিষ্ঠান ২৭১ কোটি ৭২ লাখ ৪৪ হাজার ১০০ টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে বলে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালত বিধি মতে এই টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়ে রিট নিষ্পত্তি করেন। এ সময় শুল্কবিধি মতে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২৭২ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে অপিল করে। এই অপিলেও শুল্ক ফাঁকির ২৭২ কোটি টাকা দ্রুত সরকারি কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

খুলনায় বন্ডেড ওয়্যারহাউসের লাইসেন্সপ্রাপ্ত সব কটি প্রতিষ্ঠানের মালিকই নানাভাবে আলোচিত এবং সব সরকারের আমলে প্রভাবশালী। এর মধ্যে মৌলী প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের মালিক কাজী শাহনেওয়াজ সম্প্রতি তাঁর হিমায়িত মত্স্য প্রক্রিয়াজাত কারখানায় ভেজাল ওষুধ তৈরিকালে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

চিংড়ি রপ্তানিকারক ও প্রিন্টিং-প্যাকেজিং ব্যবসা যেন একই সূত্রে গাঁথা। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি রপ্তানিকাজে ব্যবহূত প্যাকেজিংয়ের বিবিধ আমদানি করা পণ্য এই বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবহারের সুযোগ পায়। এই সুযোগের চরম অপব্যবহারও করা হয়। বিধি মতে, আমদানি করা এসব পণ্যের শুল্ক পরিশোধ না করেই আমদানিকারকরা গুদামজাত করতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে, এসব পণ্য দেশের খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এসব চিংড়ি রপ্তানির কাজেই ব্যবহার করতে হবে।

প্রসঙ্গত, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হয়। এর ২৮ মাস পর গত মাসে (ডিসেম্বর ২০১৬) শেয়ারবাজারের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটির উত্পাদন বন্ধ ঘোষণা দেখানো হয়। সেখানে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অসহযোগিতা ও কাঁচামালের সংকট এ জন্য দায়ী। এখানে আরো বলা হয়েছে, এনবিআর প্রতিষ্ঠানটির বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করেছে এবং বেশ কিছু কাঁচামাল আটকে রেখেছে। ফলে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
Hasan
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  [দেশের খবর] অপহরণের পর ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা Hasan 0 2,283 07-29-2021, 09:28 AM
Last Post: Hasan
  [দেশের খবর] ‘চেয়ারম্যান আমাকে ধর্ষণ করতে বললে তিনজন ধর্ষণ করে’ Arif 0 1,741 09-01-2017, 10:52 AM
Last Post: Arif
  [দেশের খবর] অভিনয়ে সুযোগ দেওয়ার নামে রমরমা সেক্স র্যাকেট Rakib 1 1,860 09-01-2017, 10:49 AM
Last Post: Arif
  [দেশের খবর] ৪০ গ্রামে পালিত হচ্ছে ঈদুল আজহা Rakib 0 1,535 09-01-2017, 10:34 AM
Last Post: Rakib
Sad বিকাশের সার্ভার হ্যাক করে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা Hasan 0 1,669 08-29-2017, 03:53 PM
Last Post: Hasan
  [দেশের খবর] ঢাকা sarif 0 2,356 07-31-2017, 01:06 PM
Last Post: sarif
  [দেশের খবর] রাণীশনকৈল sarif 0 2,127 07-02-2017, 06:53 PM
Last Post: sarif
  সিলেটে খুনের আসামিকে কুপিয়ে হত্যা, অস্ত্রসহ আটক ৩ Playboy 0 1,868 04-01-2017, 08:55 AM
Last Post: Playboy
  এবার ৬৫ কোটি টাকার বই বিক্রি Hasan 0 1,807 02-28-2017, 09:42 PM
Last Post: Hasan
  রাজনীতিতে ভালো মানুষ দরকার: কাদের Hasan 0 1,708 02-27-2017, 11:16 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 2 Guest(s)