02-22-2017, 12:22 AM
সেই মেয়েটি
...............
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে হেটে চলেছি,
হেটে চলছি বললে ভুল হবে হাটতে
বাধ্য হয়েছি।
এখন অনেকটা সকাল, অনেকেরই ঘুম
ভাঙ্গেনি। আর রাস্তাঘাটে তেমন
রিকশাও বের হয়নি, তাই বাধ্য হয়ে
হাটতে হচ্ছে। সকালের হালকা
বাতাসে আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে
হাটতে মন্দ লাগছে না। ভাগ্যিস
স্টেশনটা বেশি দুরে নয়, নাহলে একদম
কাকভেজা হয়ে যেতে হত।
.
ঈশ্বরদী স্টেশনের তিন নম্বর প্লাটফর্মে
বসে আছি, সকাল হলেও এখানে এসে
সেটা মনে হচ্ছে না। স্টেশনটা একদম
লোকে লোকারণ্য, বসার মত
জায়গাটুকো ছিলোনা। হয়ত আমি খুব
ভাগ্যবান, না হলে কিভাবে বসার
জায়গাটা পেলাম।
-এই যে উঠুন.......এটা আমার জায়গা।
একটা মেয়ে আমাকে ডাকছে,
মেয়েটা দেখতে খুব যে ভালো তা নয়
আবার খুব যে খারাপ সেটাও নয়,
মোটামোটি লম্বা বললেই চলে, নীল
জামাটা ভালোই মানিয়েছে।
সবচেয়ে অবাক হলো তার চুল দেখে, এত
বড় চুল খুব কমই দেখা যায় এখন।
.
মেয়েটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ
করে তার থেকে চোখ ফিরিয়ে আপন
মনে বসে আছি।
-এই যে আপনাকে কিছু বলছি, কানে কম
শুনেন নাকি।
আরেকবার মেয়েটির দিকে
তাকালাম, রাগে মেয়েটির নাক
লাল হয়ে গেছে। সুন্দরী মেয়েরা
রাগলে সেটা নাক দেখেই বোঝা
যায়। মেয়েটির চোখে অসম্ভব বিরক্তি
বোঝা যাচ্ছে, কিছু একটা বলা দরকার।
নাহ, এভাবে থাকাই ভালো কিছু
বলতে গেলে সিটটা হারাতে হবে,
তার থেকে মেয়েটাকে আরেকটু
রাগানো যাক।
.
মেয়েটি রাগে কটমট করছে আর এদিক
ওদিক তাকাচ্ছে, চশমার ফাঁক দিয়ে
মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাচ্ছি।
-বাদাম খাবেন......?? দাড়িয়ে সময় পার
করার জন্য বাদাম কিন্তু দারুন ভুমিকা
পালন করে।
আমার এরকম কথা শুনে মেয়েটি কিছুটা
আশ্চর্য আর বিরক্ত হয়ে আমার দিকে
তাকালো। আসলে নিজের সিটের
দখলদারের কাছে থেকে এরকম একটা
কথা শুনলে রাগ হওয়ারই কথা।
.
বাইরে হালকা বৃষ্টিটা এখনও ঝড়েই
চলেছে। ট্রেন আসতে আরো অনেকটা
লেট হবে।
মেয়েটি এখনও আমার পাশে দাড়িয়ে
আছে আর মনে মনে অসংখ্য গালাগাল
দিচ্ছে যেটা আমি বুঝতে পারছি না।
সিট থেকে উঠে দাড়ালাম, মেয়েটি
আমার দিকে তাকালো। কিছু না বলে
সামনের দিকে হাটতে লাগলাম,
পেছনে একবার তাকিয়েছিলাম
কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে
ছিলো।
-এই যে ধরুন.....!!
মাথা তুলে তাকাতেই দেখি
মেয়েটি, হাতের মধ্যে বাদাম ধরিয়ে
দিয়ে বলল, দাড়িয়ে সময় পার করার জন্য
বাদাম কিন্তু দারুন ভুমিকা পালন করে।
কিছু বলার আগেই মেয়েটি চলে গিয়ে
নিজের জায়গায় বসলো, স্টেশনে হয়ত
আমার মত দ্বিতীয় ফাযিল আর কেউ
নেই। থাকলে নিশ্চয় এতক্ষণে
মেয়েটির সিট আবার দখল হয়ে যেত।
.
বাদামগুলো খাচ্ছি আর মাঝে মাঝে
চশমার ফাঁক দিয়ে মেয়েটির দিকে
তাকাচ্ছি। মেয়েটি আনমনে বৃষ্টি
দেখছে, এই প্রথমবার তাকে মায়াবী
লাগছে।
ট্রেন আসতে আরো ঘন্টাখানেক
লাগবে। বাদামগুলোও প্রায় শেষ,
অন্যের কেনা বাদামের বোধয়
স্বাদটা দিগুণ হয়।
-বাদাম কি আরো লাগবে.....??
মেয়েটিকে আমার পাশে দেখে
কিছুটা অবাকই হচ্ছি। তার সিটটা
আবার বুক হয়ে গেছে, আমার মত কেউ নয়
সে নিজেই উঠে এসেছে।
তার কথার উত্তর না দিয়ে বাদামের
শেষ অংশটা খাচ্ছি।
মেয়েটি ফিরে যাচ্ছে, হয়ত কারো
উত্তর না পেলে এরকমই হয়, তার মুখে
বরাবরের মতো রাগের আভাস
পাচ্ছিলাম, কাছের কেউ হলে নিশ্চয়
মেরে ফেলতো।
.
আমি নীল যশোরে একটা কাজের জন্য
যাচ্ছি, চুপচাপ থাকতে ভালোবাসি।
মেয়েদের রাগাতে ভালো লাগে,
তাই যখন যাকে সুযোগ পাই রাগানোর
সুযোগ ছাড়ি না। বড় ফ্রেমের চশমায়
প্রায় হিমু টাইপের একজন কিন্তু হিমু নই।
মেয়েটি অনেকটা রেগে গেছে,
মাঝে মাঝে অগ্নিদৃষ্টিতে
তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে, কাঁচা খেয়ে
ফেলবে।
এভাবেই লুকোচুরি রাগারাগির
মাঝেই ট্রেন চলে আসলো, আমার একটা
অভ্যাস হলো সবার শেষে ট্রেনে ওঠা।
ট্রেনে উঠে নিজের সিটে বসতেই
আমার চক্ষু ছানাবড়া, কারণ পাশের
মেয়েটি সেই রাগী মেয়েটি।
পাশে বসতেই মেয়েটি রাগী গলায়
বললো এটা কি আপনার সিট......??
কিছু না বলে টিকিট টা তার হাতে
ধরিয়ে দিলাম।
টিকিট দেখে মেয়েটি উচ্চস্বরে
হাসি দিয়ে উঠলো।
কারণ, টিকিটে সিটের জায়গায়
লেখা ছিলো
"সিট নাই"।।
..
written by: Rashed Hasan (মিঃনীল)
...............
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে হেটে চলেছি,
হেটে চলছি বললে ভুল হবে হাটতে
বাধ্য হয়েছি।
এখন অনেকটা সকাল, অনেকেরই ঘুম
ভাঙ্গেনি। আর রাস্তাঘাটে তেমন
রিকশাও বের হয়নি, তাই বাধ্য হয়ে
হাটতে হচ্ছে। সকালের হালকা
বাতাসে আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে
হাটতে মন্দ লাগছে না। ভাগ্যিস
স্টেশনটা বেশি দুরে নয়, নাহলে একদম
কাকভেজা হয়ে যেতে হত।
.
ঈশ্বরদী স্টেশনের তিন নম্বর প্লাটফর্মে
বসে আছি, সকাল হলেও এখানে এসে
সেটা মনে হচ্ছে না। স্টেশনটা একদম
লোকে লোকারণ্য, বসার মত
জায়গাটুকো ছিলোনা। হয়ত আমি খুব
ভাগ্যবান, না হলে কিভাবে বসার
জায়গাটা পেলাম।
-এই যে উঠুন.......এটা আমার জায়গা।
একটা মেয়ে আমাকে ডাকছে,
মেয়েটা দেখতে খুব যে ভালো তা নয়
আবার খুব যে খারাপ সেটাও নয়,
মোটামোটি লম্বা বললেই চলে, নীল
জামাটা ভালোই মানিয়েছে।
সবচেয়ে অবাক হলো তার চুল দেখে, এত
বড় চুল খুব কমই দেখা যায় এখন।
.
মেয়েটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ
করে তার থেকে চোখ ফিরিয়ে আপন
মনে বসে আছি।
-এই যে আপনাকে কিছু বলছি, কানে কম
শুনেন নাকি।
আরেকবার মেয়েটির দিকে
তাকালাম, রাগে মেয়েটির নাক
লাল হয়ে গেছে। সুন্দরী মেয়েরা
রাগলে সেটা নাক দেখেই বোঝা
যায়। মেয়েটির চোখে অসম্ভব বিরক্তি
বোঝা যাচ্ছে, কিছু একটা বলা দরকার।
নাহ, এভাবে থাকাই ভালো কিছু
বলতে গেলে সিটটা হারাতে হবে,
তার থেকে মেয়েটাকে আরেকটু
রাগানো যাক।
.
মেয়েটি রাগে কটমট করছে আর এদিক
ওদিক তাকাচ্ছে, চশমার ফাঁক দিয়ে
মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাচ্ছি।
-বাদাম খাবেন......?? দাড়িয়ে সময় পার
করার জন্য বাদাম কিন্তু দারুন ভুমিকা
পালন করে।
আমার এরকম কথা শুনে মেয়েটি কিছুটা
আশ্চর্য আর বিরক্ত হয়ে আমার দিকে
তাকালো। আসলে নিজের সিটের
দখলদারের কাছে থেকে এরকম একটা
কথা শুনলে রাগ হওয়ারই কথা।
.
বাইরে হালকা বৃষ্টিটা এখনও ঝড়েই
চলেছে। ট্রেন আসতে আরো অনেকটা
লেট হবে।
মেয়েটি এখনও আমার পাশে দাড়িয়ে
আছে আর মনে মনে অসংখ্য গালাগাল
দিচ্ছে যেটা আমি বুঝতে পারছি না।
সিট থেকে উঠে দাড়ালাম, মেয়েটি
আমার দিকে তাকালো। কিছু না বলে
সামনের দিকে হাটতে লাগলাম,
পেছনে একবার তাকিয়েছিলাম
কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে
ছিলো।
-এই যে ধরুন.....!!
মাথা তুলে তাকাতেই দেখি
মেয়েটি, হাতের মধ্যে বাদাম ধরিয়ে
দিয়ে বলল, দাড়িয়ে সময় পার করার জন্য
বাদাম কিন্তু দারুন ভুমিকা পালন করে।
কিছু বলার আগেই মেয়েটি চলে গিয়ে
নিজের জায়গায় বসলো, স্টেশনে হয়ত
আমার মত দ্বিতীয় ফাযিল আর কেউ
নেই। থাকলে নিশ্চয় এতক্ষণে
মেয়েটির সিট আবার দখল হয়ে যেত।
.
বাদামগুলো খাচ্ছি আর মাঝে মাঝে
চশমার ফাঁক দিয়ে মেয়েটির দিকে
তাকাচ্ছি। মেয়েটি আনমনে বৃষ্টি
দেখছে, এই প্রথমবার তাকে মায়াবী
লাগছে।
ট্রেন আসতে আরো ঘন্টাখানেক
লাগবে। বাদামগুলোও প্রায় শেষ,
অন্যের কেনা বাদামের বোধয়
স্বাদটা দিগুণ হয়।
-বাদাম কি আরো লাগবে.....??
মেয়েটিকে আমার পাশে দেখে
কিছুটা অবাকই হচ্ছি। তার সিটটা
আবার বুক হয়ে গেছে, আমার মত কেউ নয়
সে নিজেই উঠে এসেছে।
তার কথার উত্তর না দিয়ে বাদামের
শেষ অংশটা খাচ্ছি।
মেয়েটি ফিরে যাচ্ছে, হয়ত কারো
উত্তর না পেলে এরকমই হয়, তার মুখে
বরাবরের মতো রাগের আভাস
পাচ্ছিলাম, কাছের কেউ হলে নিশ্চয়
মেরে ফেলতো।
.
আমি নীল যশোরে একটা কাজের জন্য
যাচ্ছি, চুপচাপ থাকতে ভালোবাসি।
মেয়েদের রাগাতে ভালো লাগে,
তাই যখন যাকে সুযোগ পাই রাগানোর
সুযোগ ছাড়ি না। বড় ফ্রেমের চশমায়
প্রায় হিমু টাইপের একজন কিন্তু হিমু নই।
মেয়েটি অনেকটা রেগে গেছে,
মাঝে মাঝে অগ্নিদৃষ্টিতে
তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে, কাঁচা খেয়ে
ফেলবে।
এভাবেই লুকোচুরি রাগারাগির
মাঝেই ট্রেন চলে আসলো, আমার একটা
অভ্যাস হলো সবার শেষে ট্রেনে ওঠা।
ট্রেনে উঠে নিজের সিটে বসতেই
আমার চক্ষু ছানাবড়া, কারণ পাশের
মেয়েটি সেই রাগী মেয়েটি।
পাশে বসতেই মেয়েটি রাগী গলায়
বললো এটা কি আপনার সিট......??
কিছু না বলে টিকিট টা তার হাতে
ধরিয়ে দিলাম।
টিকিট দেখে মেয়েটি উচ্চস্বরে
হাসি দিয়ে উঠলো।
কারণ, টিকিটে সিটের জায়গায়
লেখা ছিলো
"সিট নাই"।।
..
written by: Rashed Hasan (মিঃনীল)
Hasan