Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

সন্তানের জীবন গড়ার দায় কেবল মা-বাবার নয়

Googleplus Pint
#1
আবার একটি মৃত্যু। নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে উত্তরার পর এবার খুন হলো রাজধানীর তেজকুনি পাড়ার আজিজ নামের এক কিশোর। আমাদের দেশে কিছুদিন পরপর একটি ঘটনার আবির্ভাব ঘটে আর সারাদেশ জুড়ে চলে সেই ঘটনার সিরিজ প্রদর্শনী।

গত কয়দিন মনে হচ্ছে শুরু হলো শিশু ও কিশোরদের খুনের সিরিজ। উত্তরার ঘটনাসহ সারাদেশে ঘটে যাওয়া আরও কিছু ঘটনা আমাদের আবার ভাবতে বাধ্য করছে আমাদের কিশোর, তরুণদের বেড়ে ওঠা, তাদের সামাজিকীকরণ, তাদের প্রকৃত শিক্ষার বিষয়টি।

এই আলোচনায় প্রথমেই যে কথাটি উঠে আসে, সেটি হচ্ছে, পরিবারের দায়। পরিবার কতটুকু সচেতন তাদের সন্তানের ব্যাপারে। কতটা খোঁজ রাখেন বাবা-মা—তাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে। সে কোনও খারাপ সংশ্রবে জড়িয়ে পড়ছে কিনা।

এটা খুব স্বাভাবিক যে সন্তানের যেকোনও বিষয়ে প্রথমেই আলোচনায় আসবে মা-বাবার ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু সত্যি কি সন্তানের সুষ্ঠু জীবন নিশ্চিত করায় কেবল পরিবারই একক ভূমিকা রাখতে পারে? আসুন তবে দেখি সন্তানের বেড়ে ওঠার বিভিন্ন বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে এ যুগের পরিবারের ভূমিকা কোথায়? একজন সন্তান যখন প্রথম জন্ম নেয়, তখন মা-বাবা থাকে তার দুনিয়া। মা-বাবার বাইরে সে আর কাউকেই চিনতে শেখে না।

ধীরে ধীরে সে সন্তান স্কুলে যাওয়া শুরু করে। জীবনের প্রথম বাইরের বড় জগতের সঙ্গে পরিচিত হয়। সেখানে সে খুঁজে পায় তার মতো আরও কিছু শিশুকে, গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। সেইসব বন্ধুত্বের সূত্রে তাদের পরিবারের সঙ্গেও পরিচয় ঘটে। জীবনের পাঠশালায় সে পায় তার শিক্ষকদের, যাদের কাছে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বুনিয়াদ গড়ে ওঠে।
ধীরে ধীরে সেই শিশু প্রবেশ করে তার কৈশোরে। তার জগৎ আরও বড় হতে থাকে। গড়ে ওঠে তার নিজস্ব একটি ভুবন। আজকাল গ্লোবালাইজেশনের যুগে সেই কিশোর কেবল তার মা-বাবা বা শিক্ষকের ওপরেই নির্ভরশীল থাকে না। তার জানার আগ্রহ তাকে টেনে নিয়ে যায় সীমানা ছাড়িয়ে অসীমের মাঝে। সেই জগতে কখনও কখনও সে একান্তে নিজেই ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। কারণ তার তখন ব্যক্তিত্বের গঠন শুরু হয়। সে চায় তার মতকে প্রাধান্য দেওয়া হোক। যখনই সেখানে বাধা পায়, তখনই শুরু হয় লুকোচুরি। কৌতূহলী মন তাকে বাধ্য করে নতুন কিছুর আবিষ্কারে। আমরা কথা বলছি একবিংশ শতকের কিশোরদের নিয়ে যাদের জ্ঞান এখন ক্ষেত্র বিশেষে তাদের মা-বাবা এমনকি তাদের শিক্ষকদের চেয়েও এগিয়ে থাকে। প্রযুক্তি তাদের এই এগিয়ে থাকার ক্ষেত্রে রেখেছে এক বিশেষ ভূমিকা।
একবার ভেবে দেখুন, শহুরে জীবনে বেশিরভাগ মা-বাবাই হন কর্মজীবী। কর্ম ব্যস্ত জীবনে মা-বাবা সর্বদা ব্যস্ত থাকেন জীবিকার সন্ধানে। সন্তানের একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য তারা প্রাণান্ত চেষ্টা করেন। একটি উন্নয়নশীল দেশের মা-বাবা সর্বদাই পার করে চলেছে এক অনিশ্চিত বর্তমান ও শঙ্কায় থাকেন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের।
একটি পরিবারের কেইস হিস্ট্রি যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে আরও একটু পরিষ্কার হবে। ধরে নিন একটি পরিবারে বাস করে মা-বাবা আর তাদের সন্তান। মা-বাবা দু’জনেই কর্মজীবী। সকালে বাইরে যান আর সন্ধ্যায় বা রাতে ফেরেন। তাদের কিশোর সন্তান থাকে স্কুলে, স্কুল থেকে ফিরে সে হয় বাসায় বসে থাকে, না হয় বাইরে খেলতে যায় বন্ধুদের সঙ্গে। সেই সন্তান কতদিন বাসায় একা বসে থাকবে? তার মন কেবল ছুটে চলে বাইরের জগতে। মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ বলতে কেবল মোবাইল ফোনে কথা বলা। কোনও মা-বাবাই চান না তাদের সন্তান একা থাকুক, কোন বদ-অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ুক। যেকোনও সচেতন মা-বাবাই চেষ্টা করেন তাদের যেটুকু সময় হাতে থাকে, সেটাতে সন্তানের সঙ্গে কাটাতে। কিন্তু যারা সপ্তাহে ছয়দিন কাজ করেন, তাদের হাতে অফিসদিনগুলোতে সময় বলতে সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে ঘুমানোর আগে মাত্র কয় ঘণ্টা আর ছুটির দিনে। এটুকু সময় কি যথেষ্ট আমাদের এই ক্রমে ক্ষয়ে পড়া সমাজ থেকে আদরের সন্তানকে রক্ষার মতো প্রয়োজনীয় সুরক্ষাবলয় তৈরি করতে? সেটা কতটা বাস্তব হয়?
বাস্তবে সেটা যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন, আমাদের সন্তান যতটুকু সময় বাবা, মায়ের থেকে আলাদা থাকে সেই সময়টারও সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। মানে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কী শিখছে, কার সঙ্গে মিশছে, তার মধ্যে কোনও ধরনেরকা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে কিনা বা সে ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে কিনা, সে সব বিষয় আপনি জানবেন কিভাবে? এই জায়গাতে দরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি সচেতন ভূমিকা। যা আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই করে না। শিক্ষকরাও রুটিনমাফিক আসে যায়, পড়া দেন, পড়া নেন। ছাত্রদের সঠিক বিকাশ হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে দেখার গরজ কই তাদের? আজকাল বেশিরভাগ শিক্ষককে দেখলেই মনে হয় তারা অন্য কোথাও চাকরি না পেয়ে এই পেশায় এসেছে। এখানে তাদের জন্য নেই কোনও মোটিভেশন। সুতরাং কথা বলার আছে এই জায়গাটি নিয়েও।
আপনি ভাবছেন বাইরের জগতে গেলে আমার সন্তান খারাপ হয়ে যাবে। সন্তানকে আপনি বাসায় আটকে রাখলেন। আপনি না করলেন আর সন্তান সুবোধের মতো বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। তাহলে সে সন্তানের বিকাশের পথ কী? সে সামাজিক হবে কিভাবে? মানুষের সঙ্গে মেশা বন্ধ করলে সে শিখবে কিভাবে মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধ, মমত্ববোধ গড়ে উঠবে কিভাবে? সেতো তার জগতে কেবল পেয়েছে মা-বাবা আর ভাই বা বোনকে। সে কখনও বাইরের দুনিয়ার চ্যালেঞ্জ দেখেনি। দেখেনি মানুষের মধ্যে থাকা বৈচিত্র্য কিভাবে মোকাবিলা করতে হয়।
যে সন্তান বাইরে মেশে না, সে সারাদিন বাসায় বসে হয় গেইম খেলবে, না হয় টিভি দেখবে। সেখানেই বা কী দেখছে আর কী শিখছে?
দায়ী করতে হবে আমাদের এই অনিরাপদ সামাজিক ব্যবস্থাকেও। ভেবে দেখতে হবে শুধু মা-বাবাই নিশ্চিত করতে পারবেন না সন্তানের নিরাপদ জীবনযাপন।
এখানে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভুমিকা রাখতে হবে। যেন আমরা নিশ্চিত করতে পারি, আমাদের সন্তানের নিরাপদ বেড়ে ওঠা। ভেবে দেখতে হবে এই প্রজন্মে যারা মা-বাবা হচ্ছেন, তারাও কিন্তু বেড়ে উঠেছেন একটি বিচ্ছিন্ন সমাজব্যবস্থা থেকে।
ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো আজ ক্ষয়িষ্ণু। নেই কোনও সামাজিক কার্যক্রম। পারিবারিক বন্ধন আজ কেবল মা-বাবা আর তাদের সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে। কেউ কারও খোঁজ নেওয়ার মতো সময় পায় না। এ কারণে পারিবারিক শিক্ষাকে যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও দিতে হবে পারিবারিক শিক্ষা। সেখানেও বাচ্চাদের শেখাতে হবে পরিবার কী, পারিবারিক মূল্যবোধ কী, মানুষ মনুষ্যত্বের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে হবে শিক্ষকদেরও। প্রচার মাধ্যমগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Hasan
Reply


Messages In This Thread
সন্তানের জীবন গড়ার দায় কেবল মা-বাবার নয় - by Hasan - 01-22-2017, 10:46 PM

Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  ওয়েবসাইট তৈরি করতে ক্লিক করুন Hasan 7 125,999 01-17-2019, 09:50 PM
Last Post: rtrashed
  অবাক করা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা! Hasan 0 3,454 02-22-2017, 05:35 PM
Last Post: Hasan
  ভালোবাসার নামে দেহ বিলানোটাকে কি ভালোবাসা বলে ? Hasan 0 2,821 01-14-2017, 09:11 PM
Last Post: Hasan
  কে বলে দেশে গণতন্ত্র নেই! Hasan 0 2,464 01-14-2017, 09:10 PM
Last Post: Hasan
  “ বাংলাদেশ জানতো, বিপদ আসছে” Hasan 0 2,408 01-14-2017, 09:09 PM
Last Post: Hasan
  জ্বলিতেছে বটে, কিন্তু আনন্দে নাচিতেও হইতেছে !!!! Hasan 0 2,386 01-14-2017, 09:08 PM
Last Post: Hasan
  প্রেস্টিজের উপর ইট আর বালুর ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে Hasan 0 2,381 01-14-2017, 09:08 PM
Last Post: Hasan
  সুন্দর একটি জীবনকে সুনামির মত ধ্বংস করে দেয Hasan 0 2,383 01-14-2017, 08:17 PM
Last Post: Hasan
  এরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ। Hasan 0 2,396 01-14-2017, 08:17 PM
Last Post: Hasan
  জীবনের ৬টি বাস্তবতা যত কঠোরই হোক আপনাকে মানতেই হবে Hasan 0 2,467 01-14-2017, 08:15 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)