Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

গল্পঃ স্মৃতির অনুভূতি

Googleplus Pint
#1
'সব কাব্যে সবসময় ছন্দ থাকে না। কিছু কাব্য
অহেতুক ছন্দহীন হয়। এইসব ছন্দহীন কাব্যে
লুকিয়ে থাকে কোন এক গভীর অর্থ কিংবা
জীবনবোধ। আমরা মাঝেমধ্যে সেই অর্থ
খুঁজে বের করতে ব্যার্থ হই। তাই কখনো
কখনো এই অর্থ খোঁজার চেস্টাকে আমাদের
অযথা মনে হয়।
আমাদের ছোট্ট জীবনটাও হয়তো এক একটা
কাব্য। কখনও ছন্দময় আবার কখনও ছন্দহীন।
ছন্দহীন অংশগুলোতে কোন আনন্দ থাকে না,
থাকে শুধু রুক্ষ জীবনবোধ। যদিও মেনে
নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া এই দুইয়ের উপর ভিত্তি
করেই চলে জীবন তবুও তেতো স্বাদের
বাস্তবতা আমরা মেনে নিতে পারি না। এভাবেই
পৃথিবীতে আমাদের কাব্যগুলো লেখা হয়।
হয়তো এভাবেই আমরা বাঁচি।'
অনেকদিন পর আবার একটা ভাবের স্ট্যাটাস লিখলাম।
ইদানিং যদিও ভাবসাব কম আসে। তারপরও যখন আসে
একেবারে উপচায়ে পড়ে। যাই হোক, মনে
হচ্ছে এই স্ট্যাটাসেও ওৎ পেতে থাকা বান্দর
বন্ধুগুলার সিমাহীন পচানি খাবো। খেলাম না হয়
পচানি,
তবে ইম্পরট্যান্ট বিষয় হলো ক্ষিদা লাগসে। দুপুর
৩টা বাজে অথচ বাসার কারো কোন বিকার নেই।
রান্নাঘরে আধপাকা চুলের ভদ্রমহিলা আনমনা হয়ে
জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। বয়সের ভারে
ভারী হয়ে যাওয়া ঐ শরীর নিয়ে এখনো কিভাবে
তিনি খেটে যান তা এক অজানা রহস্য। তবে এই রহস্য
আবার পৃথিবীর সকল মা'এর জানা। চুলায় ভাতের ফ্যান
উপচে পড়ছে। অথচ সেদিকে আমার আম্মার
কোন নজর নেই। জানালা দিয়ে তাকিয়ে কি
দেখছেন তা তিনি ই জানেন! আম্মা ইদানিং প্রায়ই
আনমনা হয়ে যান। দেখলে মনে হয় জগতের
সমস্ত বস্তু থেকে তার আগ্রহ উঠে গেছে।
মাঝেমধ্যে খুব জানতে ইচ্ছে করে আসলে তিনি
কি ভাবছেন!
আচ্ছা, আমার আম্মাও কি জীবন নিয়ে ক্লান্তিবোধ
করেন মাঝেমধ্যে! আমি অবশ্য কখনোই জানতে
চাইনি। আম্মাও হয়তো মনে মনে গভীরভাবে
চিন্তা করেন ফেলে আসা দিনেগুলো, পুরনো
সুখস্মৃতি কিংবা হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো নিয়ে।
তার
সব হারিয়ে ফেলার কিংবা পেতে চাওয়ার
কাহিনীগুলো হয়তো লেখা হয়না গল্প কিংবা
স্ট্যাটাস
আকারে! এই ভাবনাগুলো মনের ভিতর এক অদৃশ্য
শিকল পরিহিত অবস্থায় থেকে যায়। ঠিক যেন পোষ
মানানো পায়রা। পালক ছেটে উড়তে দেওয়া হয়
যেন খুব বেশি উড়ে যেতে না পেরে ঘরে
ফিরে আসে। খুব তেতো হলেও সত্য, আমি বা
আমরা সে খবর রাখি না।
পৃথিবীর সকল মা একইরকম। মোমবাতির মতো
নরম। গলতে গলতে আমাদের আলো দিয়ে যান
নিয়মিত। অন্ধকার না হলে আমরা উনাদের উপস্থিতি
টের পাই না কিংবা টের পাওয়ার প্রয়োজন মনে করি
না।
"আম্মা! ভাতের ফ্যান উপচে পড়ছে!" এই বলে
ছুটে এসে চুলার সুইচ অফ করে দেয় বড় আপু।
এতোক্ষণে আম্মা যেন হুশে ফিরে আসেন।
আপু জোর করে আম্মাকে ঘরে পাঠিয়ে দেন।
আপু সহজেই বুঝে ফেলেন আম্মার মনের
অবস্থা। আম্মা চলে যাওয়ার পর আপু এদিকে ঘুরে
দাঁড়ায়। আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠি, 'আমি কিছু
জানিনা'। আমার
কথার কোন পাত্তা না দিয়েই আপু নিজের ঘরে
চলে যায়। ইদানিং আপুটার খুব ভাব বেড়েছে।
সবকিছুতেই রাগ রাগ ভাব দেখায়! আগে কতো
খুনসুটি করতো, আদর করতো! আর এখন আমার
রুমের ধারেকাছেও আসে না। আবার আমি
আশেপাশে ঘুরলেও কোন পাত্তা দেয়না। আমার
রাগে ওর মাথার সব চুল টেনে ছিঁড়ে দিতে ইচ্ছে
করে।
আব্বার গলা খাঁকারি শুনে আবার নিজের মধ্যে ফিরে
আসি। এটা হচ্ছে দুপুরের খাবার টেবিলে সাজানোর
সংকেত। আপু টেবিলে খাবার সাজিয়ে দেয়। আমরা
সবাই চুপচাপ খেতে থাকি। আমাদের চুপচাপ খাবার
অভ্যাস ইদানিং কালের। আগে প্রায়ই আমার আর
আপুর
মধ্যে মুরগির রান খাওয়া নিয়ে খাবার টেবিলে
বিশাল
ঝগড়া হতো। আর আমাদের তুমুল ঝগড়া দেখে
আব্বা প্রতিবার বলতো, 'আচ্ছা এবারের মতো ভাগ
করে খেয়ে নে। সামনেরবার থেকে চার পাওয়ালা
মুরগি নিয়ে আসবো।' আব্বার এই কথা শুনে
আমাদের দুই ভাইবোনের মুখে হাসি চলে
আসতো আর আমরা ভাগাভাগি করেই খেয়ে নিতাম।
আহা! কি সব দিন ছিল!
খাওয়া শেষ করেই সবাই যার যার রুমে বিশ্রাম নিতে
চলে যায়। আমিও অগত্যা রুমে এসে বসে থাকি।
আগে প্রায়ই আমি, আম্মা আর আপু মিলে বিকেল
বেলা ছাদে জমাট আড্ডা দিতাম। এখন সেসব
সোনালি অতীত। আম্মা এখন অনেকটা নুয়ে
পড়েছেন। আগের মতো আর ধকল সহ্য
করতে পারেন না, তাই দুপুরে একটু ঘুমিয়ে বিশ্রাম
করেন। আপু রুমের দরজা বন্ধ করে গান শুনে
অথবা মোবাইল টিপে।
আমি একা একাই এখন ছাদে ঘুরি। আমার বিকেল
বেলায় গল্প করার আরো একজন সংগী ছিল।
পাশের বাড়ির ছাদটায় মাঝেমধ্যে আসতো। নাম
অনন্যা। মুভি, গান, বই এসব নিয়ে আড্ডা দিয়ে কতো
বিকেল পার করেছি তার হিসেব নেই। একে
অপরকে সময় দিতে দিতে একদিন মন ও
দেওয়ানেওয়া হয়ে গিয়েছিল। অনন্যারা এখন আর
এই এলাকায় থাকে না। শুনেছি কোন এক ঘটনায়
অনন্যা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার বাবা-মা
তাকে নিয়ে অন্য এলাকায় চলে গেছেন। এখন তাই
বিকেলগুলো বড্ড একঘেয়ে আর একলা কাটে।
সন্ধ্যা নেমে আসে। পশ্চিমের লাল আকাশ
দেখে আমার খুব বিরক্ত লাগে। গোধুলীর এই
সময়টা খুব ভয়ংকর।একটা দিনের শেষ! সমস্ত
আলোর শেষ! আমার খুব যন্ত্রণা হয়। আগরবাতির
ধোঁয়া একদম সহ্য হয়না আমার। তবুও গোধুলীর
এই সমটায় আম্মা আমার ছবির সামনে আগরবাতি
ধরিয়ে
দেন। পুরানো মালা বদলে নতুন মালা লাগিয়ে দেন।
আপু দরজা বন্ধ করে জোর করে নিজেকে
আটকে রাখে, জোরে জোরে গান শুনে।
আব্বা হাঁটার নাম করে বেড়িয়ে যান।
প্রিয় মানুষগুলোর সাথে আমার মিছেমিছি কাছে
থাকার
গল্পের হঠাৎ সমাপ্তি ঘটে। আমার খুব চিৎকার করতে
ইচ্ছে হয়, কিন্তু গলায় শব্দ আসে না। বুকের বাঁ
পাশে খুব কস্ট অনুভুত হয়। এই কস্ট প্রিয়
মানুষগুলোর সাথে কথা বলতে না পারার, তাদের
হাসি
দেখতে না পারার, তাদের একটু ছুঁয়ে দিতে না
পারার। জীবন মাঝেমধ্যে খুব নিষ্ঠুর। সারা বিকেল
ধরে উড়িয়ে চলা ঘুড়ির প্রতি মায়া জমতেই যেমন হুট
করে সন্ধ্যা নামায় নাটাইয়ের সুতো ছিঁড়ে চলে
আসতে হয়, তেমন জীবন ও অনেক সময় মায়ায়
জড়িয়ে হুট করে সুতো ছেড়ে দেয়।
গোধুলীর আলো শেষ হতে হতে আমারও
থাকার সময় ফুরিয়ে যায়। আগরবাতির ধোঁয়ার মতো
বাতাসে মিলিয়ে যেতে থাকি। আর ঘরময় পড়ে
থাকে মায়া মায়া গন্ধ!
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  [গল্প] রিফাত ও সামিয়া অসাধারন গল্প Hasan 0 2,251 01-02-2018, 05:09 PM
Last Post: Hasan
  বন্ধুত্ব Hasan 0 1,898 01-02-2018, 04:48 PM
Last Post: Hasan
  আমি আর বলবো না তুমি ভালবাস আমাকে Hasan 0 2,125 01-02-2018, 04:48 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] অতৃপ্ত মন Hasan 0 2,022 01-02-2018, 04:47 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] মহাকাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এক অশ্বথ বৃক্ষ! (কোন গল্প নয় । একটা অনুভূতি) Hasan 0 1,744 01-02-2018, 04:47 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] ভর-দুপুর Hasan 0 1,740 01-02-2018, 04:46 PM
Last Post: Hasan
  গল্প : সাদা-কালো Abir 0 1,926 01-02-2018, 04:44 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] তিতির Abir 0 1,928 01-02-2018, 04:42 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] গন্তব্যহীন Abir 0 1,738 01-02-2018, 04:41 PM
Last Post: Abir
  [জানা ও অজানা] ‘অশালীন’ পোশাক পরায় ফের সমালোচনায় দীপিকা Salim Ahmad 0 1,844 06-11-2017, 12:14 AM
Last Post: Salim Ahmad

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)