Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

ইলিশের উৎপত্তি ও ইতিহাস!

Googleplus Pint
#1
বাংলা ছাড়াও ভারতের আসামের ভাষায় ইলিশ শব্দটি পাওয়া যায়। ওড়িয়া ভাষায় একে বলা হয় ইলিশি। তেলেগু ভাষায় ইলিশকে বলা হয় পোলাসা। গুজরাটে স্ত্রী ইলিশ মোদেন ও পুরুষ ইলিশ পালভা নামে পরিচিত। পাকিস্তানের সিন্ধু ভাষায় এর নাম পাল্লা। বার্মিজরা বলে সালাঙ্ক।



মিথ আর ইতিহাসেও ইলিশের প্রভাব ব্যাপক। হিন্দুশাস্ত্রে বিষ্ণুর দশ অবতারের প্রথম অবতার হলো মৎস্য। বিষ্ণুধর্মসূত্রে মৎস্য নিধনকারী, মৎস্যচোরদের জরিমানার ব্যবস্থা ছিল। মনুস্মৃতিতে মাছ চুরিতে দ্বিগুণ দণ্ডের ব্যবস্থা ছিলো। দ্বাদশ শতকের বিভিন্ন রচনাতেও ইলিশের বিবরণ পাওয়া গেছে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার উৎসবে মাতে বলে কবি সত্তেন্দ্রনাথ দত্ত তার নাম দিয়েছেন ইলশে গুঁড়ি।



অশোকের পঞ্চম স্তম্ভলিপিতে বছরে ৫১-৭২ দিন ডিমওয়ালা স্ত্রী মাছ, ছোট মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক এবং পৌষ মাসের শুক্লা চতুদর্শী, পূর্ণিমা এবং পূর্ণিমার পরদিন, অমাবস্যা ও অষ্টমীর দিনগুলোতে বছরে কমপক্ষে ৫২ দিন থেকে ৭২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিলো।



স্বরস্বতী ও লক্ষ্মী পূজায় জোড়া ইলিশকে ধরা হয় শুভ লক্ষণ। দশমীতে তাই উৎসব জমে জোড়া ইলিশেই। ইলিশ উৎসর্গ ছাড়া অনেক পূজাই অসম্পূর্ণ থাকে। পান্তা-ইলিশে উদযাপিত হয় পহেলা বৈশাখ। তবে ইলিশের ডিম ছাড়া ও জাটকার বেড়ে ওঠার সময় বলে লক্ষ্মী পূজার পর ও সরস্বতী পূজার মধ্যবর্তী সময়ে বাঙালি হিন্দুরা ইলিশ খেতো ন‍া অতীতে।



অতুলনীয় স্বাদের এই ইলিশ পাতে না উঠলে বাঙালিয়ানা যেমন সম্পূর্ণ হয় না, তেমনি এর ব্যতিক্রমী জীবন চক্রের সঙ্গেও তুলনা চলে না আর কোনো মাছের। নোনা পানির এই মাছ ডিম পাড়তে নদীর উজান বেয়ে উঠে যায় মিঠা পানিতে।



ডিম ছাড়া হয়ে গেলে ফের ভাটিতে ভাসে সাগরের পথে। ডিম ফুটে মাছ হওয়া জাটকাও ছোটে সাগর পানে। জীবনচক্র পূর্ণ করতে ডিম ছাড়ার সময় হলে ফের উঠে আসে নদীর অগভীর পানিতে। ঘণ্টায় ৭১ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে দক্ষ সাঁতারু ইলিশ। ডিম ছাড়ার জন্য এরা ১২শ’ কিলোমিটার সাঁতরাতেও রাজি।



তবে গভীরতা ৪০ ফুট হলে সাঁতরাতে সুবিধা হয় ওদের। উজান বাওয়ার সময় কিছু খায় না এরা। ডিম ছাড়ে সাঁতরাতে সাঁতরাতে। একেকটি মাছ ডিম ছাড়তে পারে ২০ লক্ষ পর্যন্ত। সারা বছর ডিম দিলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই সবচেয়ে বেশী ডিম ছাড়ে ইলিশ।



ইলিশ মাছ ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বড় ইলিশের ওজন হয় আড়াই কেজি পর্যন্ত। পুরুষের চেয়ে আকারে বড় হয় স্ত্রী ইলিশ। বাড়েও দ্রুত। মাত্র ১ থেকে ২ বছরের মধ্যেই প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে যায় ইলিশ মাছ।



সমুদ্র, মোহনা ও নদীতে দৃশ্যমান ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র কিন্তু অনেক বিস্তৃত। বঙ্গোপসাগর থেকে শুরু করে উত্তর উপকূল ছুঁয়ে পশ্চিমে ভারত সাগর হয়ে আরব সাগর, লেহিত সাগর পর্যন্ত দেখা যায় ইলিশের বিচরণ। আরব সাগর থেকে উত্তরে ওমান ও হরমুজ প্রণালী হয়ে পশ্চিমে পারস্য ‍উপসাগরেও মেলে ইলিশের ঝাঁক। বঙ্গোপসাগর থেকে আন্দামান সাগর আর মালাক্কা প্রণালী হয়ে চীন সাগরেও ইলিশ দেখ‍া যায়।



বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা, মেঘনা ও কর্ণফুলি ছাড়াও ইলিশ মেলে শাতিল আরব, ইরান, ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস, পাকিস্তানের সিন্ধু, মায়ানমারের ইরাবতী এবং ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীর মিঠা পানিতে। বাংলাদেশে পাওয়া যায় মোট তিন প্রজাতির ইলিশ। দেশে ধরা পড়া মোট মাছের ৬/৭ ভাগের ১ ভাগ এই ইলিশই। এ মাছ ধরা ব্যবসায় নিয়োজিত দেশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ।



উচ্চ উৎপাদনশীল প্ল্যাঙ্কটোনভোজী ইলিশ মূলত খায় নীল-সবুজ শৈবাল, ডায়াটম, ডেসমিড, কোপিপোড, রটিফার।



সমুদ্রের নোনা জল থেকে ইলিশ যতো নদীর উজানে যেতে থাকে ততো তার শরীর থেকে আয়োডিন, লবণ ঝরতে থাকে। দীর্ঘ পথ চলে যত সে মিষ্টি জলে থাকে ততোই কমে তার দেহের চর্বি, লবণ, খনিজ। বাড়ে স্বাদ। তাই সমুদ্রের ইলিশের স্বাদ কম। আর স্বাদ বেশী পদ্মার ইলিশের।



অন্তত ৫০ পদ্ধতিতে ইলিশ রান্না হয়ে থাকে বাংলাদেশে। ভাপে, ভেজে, সিদ্ধ করে, কচি কলা পাতায় মুড়ে পুড়িয়ে, সরিষা, জিরা, বেগুন বা আনারস দিয়ে, শুঁকিয়ে শুটকি করে ইলিশ রান্না করা যায়। সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, কড়া ভাজা, দোপেয়াজা এবং ঝোল খুবই জনপ্রিয়। ইলিশের ডিম ছাড়াও কচুর পাতা ও ইলিশ মাছের কাটা বা মাথার ঘণ্টও বিশেষ একটি রান্না। বর্ষাকালে ডিম ভর্তি ইলিশ মাছ এবং সুগন্ধি চাল দিয়ে রান্না হয় ভাতুরী বা ইলিশ মাছের পোলাও।



চর্বিযুক্ত হওয়ায় ইলিশ রান্নায় তেল লাগে কম। আর এতে আছে প্রচুর ফ্যাটি এসিড। এই এসিড কমিয়ে দিতে পারে কোলেস্টেরল আর ইনসুলিনের মাত্রা।



প্রজনন মৌসুমে নদীর মোহনায় কড়া নজরদারির ফলে মা মাছ ধরা কমে যাওয়ায় সম্প্রতি ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে গেছে। তবে ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গার গনিপথ পরিবর্তন ও পানি কমে যাওয়ায় ডিম ছাড়ার জন্য উজানে পরিযায়ী হওয়ার আগেই ইলিশ ধরা হচ্ছে।



স্লুইস গেট নির্মাণ করে কুমার নদী বন্ধ করে দেওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে সমুদ্র থেকে নবগঙ্গা হয়ে পদ্মায় যাওয়ার পথ। চাঁদপুর সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প এবং মেঘনা-ধনাগোদা সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প জাটকা ইলিশের বিচরণ এলাকা ধ্বংস করায় ইলিশ প্রজননে নেতিবাচক প্রভাব আরো বেড়েছে।
Hasan
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  [জানা ও অজানা] অগ্নি দূর্ঘটনা থেকে বাচতে করনীয় জেনে নিন Hasan 0 6,924 03-28-2023, 11:51 PM
Last Post: Hasan
  বিয়ের পর গোপনীয়তার নাটক করেন কেনো বিয়েতোরা Hasan 0 1,986 01-01-2018, 10:36 PM
Last Post: Hasan
  ব্রেকআপের পর যে কাজগুলো করবেন না Hasan 0 2,140 12-11-2017, 11:39 PM
Last Post: Hasan
  রসগোল্লা কিভাবে এলো, প্রথম তৈরি হয়েছিল কোথায়? Hasan 4 2,943 12-07-2017, 04:31 AM
Last Post: Hasan
  হিটলার সম্পর্কে ৫টি অবাক করা তথ্য! Hasan 0 2,035 11-21-2017, 09:13 PM
Last Post: Hasan
  কোন দেশে কত ধনকুবেরের বাস? Hasan 0 1,968 11-21-2017, 09:12 PM
Last Post: Hasan
  তাজমহল নিয়ে চলমান বিতর্কে এর কিছু অজানা তথ্য Hasan 0 1,993 11-21-2017, 09:12 PM
Last Post: Hasan
  জানেন, ২০১৮ সাল নিয়ে কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন নস্ত্রাদামুস? Hasan 0 1,940 11-21-2017, 09:12 PM
Last Post: Hasan
  কীভাবে এল? হাততালি Hasan 0 2,075 11-21-2017, 09:12 PM
Last Post: Hasan
  আরব দেশগুলোর কিছু দুর্লভ তথ্য Hasan 0 2,097 11-21-2017, 09:11 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)