Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

গম্ভীর রানীর গল্প

Googleplus Pint
#1
অনেক দিন আগের কথা, চীন দেশে ছিল এক রাজা। রাজার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘো্ড়া, রাজ্যজুড়ে সুখ আর শান্তি। রাজার প্রজা প্রতিপত্তি সব ছিল। ছিল না শুধু মনে সুখ। রাজার খালি থেকে থেকে বড় একা লাগত। আসলে সেই দেশের রাজার সব ছিল, ছিল না শুধু এক রানী। তাই এই মনের অসুখ। একদিন রাজা ঠিক করলেন যে তাঁর সৈন্য-সামন্তদের নিয়ে যাবেন রানীর সন্ধানে। যেমনটি ভাবা তেমনটি কাজ। রাজা তাঁর সব চেয়ে তেজী ঘোড়াটা আর তাঁর সাতজন সবচেয়ে বিশ্বাসী আর বলিষ্ঠ সৈন্যদের নিয়ে বেরিয়ে পরলেন রানীর সন্ধানে, দেশ থেকে দেশান্তরে। নানান দেশে যান। কত দেশের কত সুন্দরী রাজকন্যে। তাদের নানান গুণ। কিন্তু রাজার মন ভরে না। কোথাই সেই মেয়ে যে রাজার মনে এনে দেবে দু দণ্ডের শান্তি, সেই সুখ। একদিন রাজা তাঁর সৈন্যসামন্তদের নিয়ে এসে পৌঁছলেন এক হ্রদের তীরে। সন্ধ্যা নেমে আসছিল, তাই তিনি ঠিক করলেন রাতটা এখানেই থেকে যাবেন। সৈন্যদের ডেকে তিনি আদেশ দিলেন হ্রদের ধারে তাঁবু খাটাতে। রাত্রে খাবার আয়োজন চলছে, এমন সময় রাজার কানে এল এক অদ্ভুত সুন্দর সুর। রাজা সেই সুরের খোঁজে হ্রদের কাছে এসে দেখলেন একটি মেয়ে চাঁদনী আলোয় হ্রদের মধ্যে ছোটো এক নৌকা বিহার করছে । চাঁদের আলোয় সেই মেয়ের অপূর্ব মায়াবী মুখখানি দেখে রাজার বুকে অচেনা এক ঢেউ চলকে উঠল। যেন এই মেয়েকেই তিনি খুঁজে চলেছিলেন এতদিন। এই মেয়েটিই গাইছে সেই অদ্ভুত মিষ্টি গান। রাজা তাঁর সৈন্যসামন্তদের ডেকে বললেন, মেয়েটিকে ডেকে আনতে।



নৌকাটি তীরে এসে পৌছল। রাজা মেয়েটিকে হাত ধরে নিয়ে এলেন পাড়ে, নিমন্ত্রণ জানালেন তাঁর সাথে নৈশভোজের। মেয়েটি সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে রাজার সাথে তাঁর তাঁবুতে এসে বসল। রাজা নানান কথার মাঝে তাকে তাঁর ভাললাগার কথা বললেন। বললেন তাকে তাঁর রানী করে দেশে নিয়ে যেতে চান। মেয়েটি শুনে জিজ্ঞেস করল তিনি তো তাকে আজই প্রথম দেখলেন, তাকে ঠিক মত চেনেনও না, তবে কেন তাকেই রানী করতে চান? সেই শুনে রাজা মেয়েটি কে সব খুলে বললেন। এও বললেন তিনি বহু দিন ধরে তারই মতো কাউকে খুঁজে চলেছিলেন দেশ-বিদেশে। রাজা তাকে আসস্ত্ব করলেন তিনি তাঁর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তাকে ভরিয়ে রাখবেন। তার সমস্ত সুখের খেয়াল রাখবেন। সেই শুনে মেয়েটি তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হল। রাজার আনন্দ আর ধরে না। পরদিন ভোরবেলা তিনি তাঁর সৈন্যসামন্তদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তাঁর রাজধানীর পথে। কিন্তু এতো কথার মাঝে রাজা তো ভুলেই গেছেন মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতে। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?” মেয়েটি জানালো তার নাম জীনা। সে নানান দেশ এ ঘুরে এখানে এসেছে। কিন্তু এর বেশি সে আর কোন কোথাই বলল না। রাজা লক্ষ্য করলেন জীনা চুপচাপ। তেমন কোন কোথাই বলছে না। রাজা তাঁকে তার বিশণ্ণতার কথা জিজ্ঞেস করতে সে বলল “চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে”।



রাজা ফিরে এলেন দেশে। বিয়ে করলেন তাঁর বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই মেয়েটিকে। দেশ জুড়ে তিনদিন ধরে চললো আনন্দের উৎসব। সবাই ভীষণ খুশী নতুন রানীকে পেয়ে। নানান রঙে নানান খুশীতে ভরে উঠল রাজার মন। কিন্তু হায়...রানীর মুখে কোথাও হাসির দেখা নাই। রানী তাঁর সব কর্তব্য সব দায়িত্ব নিপুণ হাতে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। রানীকে পেয়ে রাজ্যের সব প্রজা ভীষণ খুশী। কিন্তু, রানীর মুখে এক অদ্ভুত বিশণ্ণতা। রানীকে রাজা বহুবার জিজ্ঞেস করেছেন, তাঁর কি এই প্রাসাদে কোন অসুবিধা বা মনে কোন দুঃখ আছে কিনা। রানী তাঁর কোন উত্তরই দেন না। চুপ থাকেন।



রাজা তাঁর রানীর মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে কতকিছু করলেন, কত ভেলকিবাজি কত মশকরা দেখালেন, কিন্তু রানীর মুখে হাসি নেই। রাজার কোন পন্থাই কাজে দিল না রানীর মুখে হাসি ফটাতে। একদিন রাজার মাথায় এক অভিনব পন্থা এল রানীর মুখে হাসি আনার। তিনি তাঁর সবছেয়ে বিস্বস্ত্ব উপদেষ্টাকে ডেকে বললেন সন্ধ্যেবেলা তিনি যখন তাঁর নিজের কক্ষে থাকবেন রানীর সাথে তখন সে যেন এসে বলে বিদেশী সৈন্যরা এসে দরজায় উপস্থিত, তাঁর প্রাসাদ দখল হতে চলেছে।



সেইদিন নৈশভোজের পর রাজা তাঁর রানীকে নিয়ে তাঁর শয়নকক্ষে ছিলেন। রাজা তাঁর পালঙ্কে বসে হস্তাঙ্কন অভ্যাস করছিলেন আর রানী তাঁর এলো চুল আঁচড়াচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁর পারিষদ দৌড়োতে দৌড়াতে এসে বলল –

“মহারাজ, বিদেশী সৈন্যরা এসে প্রাসাদের দরজায় প্রাসাদ দখল করতে এসেছে, তাড়াতাড়ি চলুন।” এই শুনে রাজা তাড়াহুড়ো করে পালঙ্ক থেকে ঊঠতে গেলে তাঁর দোয়াত ঊল্টে সমস্ত কালি চোখেমুখে লেগে গেল। তাই দেখে রাণী হাসিতে ফেটে পরলেন। রাজা রাণীর এই হাসি দেখে আনন্দে লাফালাফী করতে লাগলেন। অবশেষে তাঁর পন্থা কাজে দিয়েছে। তিনি রাণীকে সব খুলে বললেন যে তিনি তাঁর মূখে হাসি ফোটানোর জন্যে এই কীর্তি করেছেন। সেই শুনে রাণী দ্বিগুণ হাসিতে ফেটে পরলেন।



কিন্তু পরদিন রাণীর মুখে আবার সেই বিষণ্ণতা ফিরে এলো। রাণীর মুখে হাসি আবার কোথাই হারিয়ে গেল। রাজা ভাবলেন রাণীর অতীতে নিশ্চয় কোনো দুঃখর ঘটনা ঘটেছে, তাই তাঁর এই বিষণ্ণতা বারবার ফিরে আসে। এমন সময় রাজার এক দূত ছুটতে ছুটতে এসে খবর দিল – “মহারাজ, বিদেশী সৈন্য এসে সিংহদুয়ার দখল করেছে, আর বেশী দেরী নেই প্রাসাদ দখল করতে।” রাজা ভাবলেন সে বোধহয় রাণীর মুখে হাসি ফেরানোর জন্যে এই কথা বলছে। রাজা বললেন - “এই কথায় রাণী আর হাসবেনা দূত, অন্য ঊপায় ভাব।” কিন্তু হায়! কোন উপায় নাই। দূত বলল - “মহারাজ এবার সত্যই বিদেশী সৈন্য প্রাসাদ আক্রমণ করেছে।। রাজা বাইরে এসে দেখলেন তাঁর প্রাসাদ বিদেশী সৈন্যরা ঘিরে ফেলেছে। কামানের গোলা এসে পড়ছে প্রাসাদের গায়ে।



রাজা চিৎকার করে তাঁর সৈন্যদের ডাকলেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। বিদেশী রাজা এসে রাজার সৈন্যসামন্তদের মেরে ফেললেন। রাজাকেও তাঁর হাতে প্রাণ দিতে হলো। বিদেশী রাজা এসে তাঁর রাজ্য, রাজপ্রাসাদ, এমনকি তাঁর রাণীও দখল করে বসল। রাজা তাঁর রাণী জিনার হাসির মাসুল দিলেন।
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  এক জনদরদী রাজা Hasan 0 1,539 01-10-2017, 03:49 PM
Last Post: Hasan
  গ্রীম ভাইদের রূপকথা Hasan 0 1,674 01-10-2017, 03:48 PM
Last Post: Hasan
  ছায়াবৃক্ষের রাজকন্যা Hasan 0 1,780 01-10-2017, 03:48 PM
Last Post: Hasan
  লাল জুতা Hasan 0 1,592 01-10-2017, 03:47 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)