Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

নক্ষত্রের গল্প

Googleplus Pint
#1
সবাই আম্মুকে বলে - " আপনার মেয়েটি ভারি লক্ষী। আজকালকার যুগে এত শান্তশিষ্ঠ মেয়ে আর হয়না! আমার মেয়েটাও যে কেন এমন হলনা… "



আম্মু ম্লান হাসে। আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু আমার আম্মু। বুকের ভেতর জমানো কোন গোপন কষ্টে আমি এতটা নিশ্চুপ নিষ্প্রান তা শুধু আম্মুই জানে। আমার দু চোখে যখন সমুদ্র ভাঙ্গে কিংবা ব্ল্যাকহোলের মত গাঢ় শুন্যতা যখন আমার বুকে জমাট বাধে তখন আমি শক্ত দু হাতে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা খুব নিরবে বসে থাকি। আম্মু গভীর ভালোবাসায় আমার মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে দেই। বলে - " আহারে আমার লক্ষী মেয়েটা… ঈশ্বর আমার ছেলেমানুষ মেয়েটার কেন এত কষ্ট?? "



মায়ের অভিযোগ শুনে ঈশ্বর হয়তো আকাশের ওপারে বসে মিটিমিটি হাসে।



ঈশ্বর নাকি তার প্রিয় মানুষগুলোকে তার খুব কাছে রাখতে চায়। কিন্তু ঈশ্বর কি কখনো আমার বাবাকে আমার চাইতেও বেশি ভালোবাসতে পারবে? তবে কেন সে আমার সাদাসিদে ভালমানুষ বাবাটাকে নক্ষত্র বানিয়ে দিল?



বাবা বলত মানুষ মরে গেলে নাকি দূরের আকাশে নক্ষত্র হয়ে যায়। তাই যেদিন আকাশ জুড়ে সজনে ফুলের মত থোকাথোকা নক্ষত্রেরা ফুটে থাকে সেদিন সারা রাত ভর আমি চুপিচুপি ওদের সাথে কথা বলি। আর… বাবাকে খুজি।



একদিন শ্রাবণের এক সন্ধ্যায় আকাশ জুড়ে ধুসর মেঘেরা কি এক আক্রোসে উন্মাদ নৃত্য জুড়েছিল। আমাদের বাড়ির ছোট্ট উঠোন বৃষ্টি জলে ভেসে গিয়েছিল সেদিন। আমি ভীষন অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছিলাম কখন বাবা অফিস থেকে ফিরবে… আর আমি বাবার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজব! সেই ছিল আমার অস্থিরতার সারা। বাবা আর ফিরলোনা। একসময় সন্ধ্যাটাও ফুরিয়ে গেল। খালেদ আন্কেল ফোন করে জানালো বাবা এক্সিডেন্ট করেছে… হসপিটালে…



তারপর একদিন খুব ভোরে হসপিটালের ধবধবে সাদা বিছানায় শুয়ে প্রভাতের পবিত্রতা গায়ে মেখে বাবা টুপ করে ঝরে গেল!



সেই সময়টা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। অনিন্দ্য সেই সময়টায় আমাকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিল। অনিন্দ্য ইয়ামিন ছিল খালেদ আন্কেলের ছেলে। আমার প্রাণের বন্ধু! আমাদের পাশের বাসায় থাকত ওরা। বাবা আর খালেদ আন্কেল বন্ধু মানুষ ছিল। সেই সুবাদে আমরা দুজন ও বন্ধু হয়েছিলাম।



অনিন্দ্যকে আমি ডাকতাম পিকু। ও খুব রাগ করত এই নাম শুনলে। তবুও আমি ডাকতাম… আমার ভাল লাগত ডাকতে। ছোট্ট মফস্বল শহরটাতে শিশুকাল থেকেই একসাথে বড় হয়েছিলাম দুজনে। ভীষন দস্যি ছিলাম। প্রজাপতির ডানার মত রঙিন ছিল আমাদের দিনগুলি।



আমরা একসাথে ঘুড়ি উড়াতাম… রঙধনু রঙা সে ঘুড়ি। কখনো সুতো কেটে আমার ঘুড়ি হারিয়ে গেলে আমি আকুল হয়ে কাঁদতাম। হারানোর ভীষন ভয় আমার। পিকু তখন মোরের মাধব কাকুর দোকান থেকে আমার জন্য লজেন্স নিয়ে আসত। কমলা রঙের চারকোনা ছোট ছোট লজেন্স। এক টাকায় চারটা পাওয়া যেত। সেই লজেন্স পেয়ে আমার মুখে রাজ্য জয়ের হাসি ফুটত!



পিকুর গাঢ় নীল রঙের একটা সাইকেল ছিল। সেই সাইকেলে চড়ে আমরা দুজন স্কুলে যেতাম। পিকু সাই সাই করে প্যাডেল ঘুরাত আর আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ওর কোমর আকরে ধরে ক্যারিয়ারে বসে থাকতাম।



কোনো কোনো দিন আমরা সমান্তরাল রেল লাইনের উপর দিয়ে হাটতে হাটতে বহুদূর চলে যেতাম! ফিরতে ফিরতে হয়তো বিকেল গড়িয়ে আধার নেমে আসত। আমি খুব শক্ত করে পিকুর আঙ্গুল ধরে থাকতাম।



কে জানত এত শক্ত হাতের বাঁধন ও একদিন ছিড়ে যাবে! পিকু ও একদিন হারিয়ে গেল। আর ফুরিয়ে গেল আমার ডানা মেলার দিন, ঘাসফড়িঙের পিছু ছোটার বিকেল, পদ্ম পাতা ছাওয়া টলমলে দীঘির জলে সাতার কাটার উদ্দাম দুপুর, সবুজ ললি আইসক্রিম খেয়ে ঠোট সবুজ করে ফেলার কাঠ ফাটা রোদ্দুর দিন, খালি পায়ে শিশির মেখে শিউলি কুড়ানো পাতাঝরা শীতের সকাল, কানামাছি খেলার আর গাছে চড়ে বেড়ানো দূরন্ত বাঁধনহারা শৈশব।



ছোট মফস্বল শহরটিতে আমি হয়ে গেলাম একা… একেবারেই একা! দস্যি আমি ভীষন ঘরকুনো আর চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম। সারাদিন আমার ছোট্ট আকাশ রঙা রুমটাতে একলা আমার বিষন্ন প্রহরগুলো অলসভাবে কেটে যেত। কোনোদিন হয়তোবা আম্মু আমাকে দুষ্টু রাজকন্যার গল্প শোনাত।



তার ও অনেক পরের কথা। সেদিন বিকেলে শরতের আকাশ জুড়ে পেজা তুলোর মত সাদা সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ করেই বড়বেলায় এসে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলার বন্ধু অনিন্দ্যকে। আমার ধুসর আর সাদা কাল দিনগুলি আবার লাল নীল হলুদ বেগুনী রঙে প্রাণ ফিরে পায়! বুকের মাঝে না বলা কত কত গল্প জমা ছিল! সেই জমানো গল্পে আমার দিন কাটছিল আনন্দের চূড়া ছুয়ে।



তারপর একদিন অনিন্দ্য আমাকে তার ভালোবাসার মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ভীষন মায়াবতী সেই মেয়েটি কেন জানিনা আমাকে কিছুতেই পছন্দ করতে পারেনি। অনিন্দ্যর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড কষ্টে আমার বুকটা ভেঙে গিয়েছিল। ইচ্ছে করছিল পৃথিবীর নিষ্ঠুর সব নিয়মগুলোকে ভেঙে চুরে একাকার করে ফেলি। কিন্তু সেদিন আমি কিছুই করিনি। শুধু অজানা অদ্ভুত একটা অভিমান আর প্রিয় হারা শুন্যতা , বেদনা বুকে ধরে খুব নিরবে এবার আমি নিজেই হারিয়ে গিয়েছিলাম বিষন্নতার শহরে। আমার একলা পৃথিবীটা শুধুই আমার আর আমার আম্মুর। ঈশ্বরকে বলেছিলাম " তুমি আমার বন্ধুকে ভাল রেখো ঈশ্বর, অনেক বেশি ভাল রেখো। "



প্রায় প্রতি রাতেই আমি প্রিয় হারার বেদনায় নীল হই, ঠিক অনিন্দ্যর ছোটবেলার নীল রঙা সাইকেলটার মত… গাঢ় নীল!



*****

শেষের কথা…



শুনেছি অনিন্দ্যর ভালোবাসার মেয়েটি অনিন্দ্যকে ছেড়ে চলে গেছে। শুনে অসম্ভব অভিমানে আমার সমস্ত কিছু এলোমেলো হয়ে যায়। এই অভিমান ঈশ্বরের উপর… এই অভিমান নিষ্ঠুর পৃথিবীর উপর।।

লেখক- নাইরা
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  [গল্প] রিফাত ও সামিয়া অসাধারন গল্প Hasan 0 2,543 01-02-2018, 05:09 PM
Last Post: Hasan
  বন্ধুত্ব Hasan 0 2,209 01-02-2018, 04:48 PM
Last Post: Hasan
  আমি আর বলবো না তুমি ভালবাস আমাকে Hasan 0 2,430 01-02-2018, 04:48 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] অতৃপ্ত মন Hasan 0 2,324 01-02-2018, 04:47 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] মহাকাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এক অশ্বথ বৃক্ষ! (কোন গল্প নয় । একটা অনুভূতি) Hasan 0 2,088 01-02-2018, 04:47 PM
Last Post: Hasan
  [গল্প] ভর-দুপুর Hasan 0 2,078 01-02-2018, 04:46 PM
Last Post: Hasan
  গল্প : সাদা-কালো Abir 0 2,232 01-02-2018, 04:44 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] তিতির Abir 0 2,219 01-02-2018, 04:42 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] গন্তব্যহীন Abir 0 2,086 01-02-2018, 04:41 PM
Last Post: Abir
  [জানা ও অজানা] ‘অশালীন’ পোশাক পরায় ফের সমালোচনায় দীপিকা Salim Ahmad 0 2,166 06-11-2017, 12:14 AM
Last Post: Salim Ahmad

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)