Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

ট্রেন স্টেশনের সেই মেয়েটি

Googleplus Pint
#1
কোন এক ট্রেন স্টেশনের পাশে হাঁটছিল অর্ণব, জিসান ও রনি। ওরা তিন বন্ধু, অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রচণ্ড ঘোরাঘুরির নেশা। অনেক কিছু জানা যায়, শেখা যায়, নানান বর্ণের নানান পেশার মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায় বলেই ঘুরতে ভাল লাগে তাদের।



হঠাৎ অর্ণবের চোখে ধরা পড়ল ২০-২২ বছর বয়সী এক তরুণী। কালো কেশ বাতাসে উড়িয়ে তাদের দিকেই আসছে। প্রায় কাছাকাছি এসে মেয়েটা একটা বাদামওয়ালা পিচ্চিকে ডাক দিল। অর্ণব, জিসান ও রনি বলাবলি করছিল মেয়েটা বোধহয় খারাপ। একটু পর জিসান বাদামওয়ালাকে ডাকল। বাদাম নেয়ার ফাঁকে মেয়েটির সম্পর্কে একটু জিজ্ঞেস করল।



পিচ্চি বলল, আফায় খুব ভালা। আমারে দেখলেই বাদাম নেয়। তয় হুনছি খারাপ কাজ কইরা টাকা কামায়! মানষে মোটর সাইকেল, গাড়ি দিয়া আইসা লইয়া যায় আবার রাইখাও যায়। ছেলেটি বলেই যাচ্ছিল। মায়ে কইছে মানুষরে ওজনে কম বাদাম দিলে পাপ অয়। এজন্যিই ওজনে কম দেই না। তাইলে খারাপ কাজ করলে পাপ অয় না?



পিচ্চিকে টাকা দিতে দিতে মেয়েটিকে ইশারা করল রনি। মেয়েটি কাছে আসল। এরা লোক দেখলেই বোঝে কে কোন উদ্দেশে কাছে ডাকছে। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হল। মেয়েটিও আজ কথা বলছে তরুণদের সাথে। এক একটা কথা বুকের যেখানে জমাট ব্যথা থাকে সেখান থেকে বোধহয় বের হচ্ছিল।



বাল্যকালের সুখস্মৃতি হাতড়াচ্ছে মেয়েটি। আনন্দময় জীবন ছিল তার। কিছুটা পড়াশোনাও করেছিল। মাত্র ১৪ বছর বয়সে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় বাবা মারা যায়। সেদিন সেও ছিল সাথে। ইশ্ যদি মরতাম ভালই হত। পাপ কম, হিসেব কম, সোজা স্বর্গে চলে যেতাম।



মা কি করে আপনার? হঠাৎ প্রশ্ন করল জিসান। অন্যের বাসায় কাজ করে। হকচকিয়ে উত্তর দিল মেয়েটি। ১৭-১৮ বছর বয়সে মাত্র ২৫ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেয় আমার। মায়ের অনেক কষ্টে জমানো টাকা ছিল।



বিয়ের প্রথম মাস ভালই কাটছিল। স্বামীর আদর-ভালবাসায় দুনিয়াকেই স্বর্গ মনে করছিলাম। মাসের শেষে আস্তে আস্তে ভালবাসায় ভাঁটা পড়তে থাকে। একটা চাকুরি করত। বিয়ের পরপরই ছেড়ে দিয়েছে। এখন নতুন চাকুরি খুঁজছে।



মায়ের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য জোর করত। অলস, কাজকর্ম করতে চায় না। আমি আনতে চাইনি। এক সময় বলত যেভাবে পারিস টাকা উপার্জন করবি। ভাবছিলাম হাতে টাকা নাই তাই রাগের মাথায় এমন কথা বলছে। পরে বুঝছিলাম এটাই তার মনের কথা ছিল। একদিন সন্ধ্যাবেলা আমার স্বামীই আমাকে এই ট্রেন স্টেশনে রেখে যায়!



চোখযুগল ছলছল করছে মেয়েটির। স্বামীর আদেশ মানছি। পাপতো করছি না! স্বামীর কথা অমান্য করলে স্বর্গে যাব কিভাবে? এখন বাসায় গেলে দেখব সে আরামে ঘুমাচ্ছে। বড়ই সুখের সে ঘুম। রাগ নাকি অভিমান তেমনকিছু বোঝা গেল না কথাগুলোয়।



একটা দীর্ঘশ্বাস! নিরবতা-নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে রনি বলল, একটা শক্ত বড় ইট সংগ্রহ করতে পারবেন না? বলেই যাচ্ছে রনি। ইটটা আপনার অলস-অকর্মণ্য স্বামীর বিছানার পাশে রাখবেন। যেন সে বুঝতে না পারে। যখন সে গভীর ঘুমে থাকবে তখন ইটটা সোজা কপাল বরাবর মারবেন। এক আঘাতে মারলে ওর কষ্ট কম হবে, আপনার পাপও কম হবে।



আতকে উঠল মেয়েটি। এ কী বলছেন! ও আমার স্বামী। এই বলে মেয়েটি চলে যেতে চাইল। কথাটি হয়তো তার ভাল লাগেনি। অর্ণব, জিসান, রনি কেউই থামাল না। কোনো একদিকে হাঁটা দিল মেয়েটি। অন্ধকারের দিকে, না হয় আলোর দিকে….!



বিষন্ন মনে ট্রেনে উঠল ওরা তিন বন্ধু। টিকেট ছাড়াই ওঠা যায় এসব ট্রেনে! একটু পর টিকেট চেকার আসল। অধিকাংশই লোকাল বাসের মত নগদ টাকা বের করছে। টিকেট বিহীন টাকা। কার পেটে যাবে ভেবে কাজ কী অর্ণবদের?



শুধু ভাবল, কারও পাপকে সমাজ ঘৃণা করে আর কারও পাপকে সমাজ গ্রহণও করে। ভাবতে ভাবতে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছে গেল….



[গল্পটি ইন্টারনেট হতে সংগ্রহিত]
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  অপূর্নতা Hasan 0 1,606 02-22-2017, 11:23 AM
Last Post: Hasan
  মাঝেমাঝে ভালোবাসা হয়ে যায় অর্থহীন, বিক্রি হয়ে যায় স্বার্থের কাছে । Hasan 0 1,699 02-22-2017, 12:23 AM
Last Post: Hasan
  শেষ বয়সে Hasan 0 1,559 02-22-2017, 12:23 AM
Last Post: Hasan
  #ভাষা_দিবসের_গল্প Hasan 0 1,408 02-22-2017, 12:20 AM
Last Post: Hasan
  অসুস্থ মেয়ের প্রতি ভালোবাসায় জরিয়ে পড়লো ছেলেটি অতঃপর Hasan 0 2,042 02-21-2017, 08:57 PM
Last Post: Hasan
  এক মিনিটের গল্প - শেষ অশ্রু Hasan 0 1,859 01-10-2017, 03:41 PM
Last Post: Hasan
  ‘একজন খারাপ বাবার চিঠি’ Hasan 0 1,614 01-10-2017, 03:40 PM
Last Post: Hasan
  তুমি আর কিসারেট (সিগারেট) খাবানা।ডক্টর আঙ্কেল বলে সিগ্রারেট খেলে ক্যান্সার হয়। Hasan 0 1,913 01-10-2017, 03:40 PM
Last Post: Hasan
  একজন পতিতার গল্প Hasan 0 1,532 01-10-2017, 03:39 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)