Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

গল্পঃ প্রেম নেই

Googleplus Pint
#1
নিশাতকে কড়া ধমক দিয়ে চুপচাপ
দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। স্থান,
বাড়ির
ছাদ। সময়, অপরাহ্নের সবে শুরু।
বাতাস বইছে, বাতাসে বসন্তের
মনোমূগ্ধকর সজীব ঘ্রাণ। আকাশে
চনমনে রোদ। যতটা না বাতাস বইছে
রোদ পড়ছে তারচেয়ে বেশি। তবু এই
গরমে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দারুণ
লাগছে। আমার পাশে এখনও নিশাত
দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা ভীষণ চঞ্চল
প্রকৃতির, দুষ্টুমির ছলে আমার
হাতের সিগারেটে একটান দিতে
চেয়েছিল। এজন্যই তাকে ধমক
দিয়েছি। হঠাৎ আমার ঠোঁট থেকে সে
সিগারেট কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে
দিলো।
-> এটা কী হল? (আমি)
-> প্রতিশোধ নিলাম, আপনি আমায়
ধমক দেবেন আর আমি চুপ করে
থাকব নাকি?
(নিশাত)
-> প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে? এবার
দয়া করে যাও।
-> যাব না।
-> ঠিক আছে, আমিই চলে যাচ্ছি।
আমি পা বাড়াতেই সে আমার হাতটি
ধরলো। চেয়ে রইলো আমার মুখের
দিকে। তার সেই চাহনিতে আমি
খানিকটা দেউলিয়া হয়ে গেলাম,
পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে
বলি, হাত ধরছ কেন তুমি?
-> আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই।
-> আমারও কিন্তু ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলে
একটা ব্যাপার আছে।
-> কী করবেন আপনি, চড় মারবেন?
আমি নির্বিকার গলায় বলি, হ্যা
দরকার হলে তাও করতে পারি।
-> পারলে তাই করুন।
সে নরম কন্ঠে বলে, তাতে অন্তত
আমার গালে আপনার হাতের স্পর্শ
থাকবে।
আমি বিব্রত হয়ে বলি, নিশাত,
তোমার সমস্যা কী?
-> আমি নিজেও জানি না। মনে হয়
আমি আপনার প্রেমে পড়েছি।
এটা বলেই সে ছুটে গিয়ে ছাদ থেকে
প্রস্থান করলো। আর আমি অবাক
হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
.
পরদিনের ঘটনা। সকালবেলা
বারান্দায় দাঁড়িয়ে টবে লাগানো
ফুলগাছগুলোয় পানি স্প্রে করছি,
তখন বসার ঘর থেকে মা নাম ধরে
ডাকলো, এই জামিল, এদিকে আয়
তো বাবা।
আমি বসার ঘরে গিয়ে দেখি
সেখানে
মা আর পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি
অর্থাৎ নিশাতের মা একসাথে বসে
আড্ডা দিচ্ছেন। আমাকে দেখে
আন্টি বলেন, কেমন আছ খোকা?
-> জ্বী ভাল। আপনি ভাল আছেন
তো?
-> আছি তো কোনোরকম...
মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তায় আছি।
-> কেন, নিশাত আবার কী করলো
আন্টি?
-> কিছুই না। আসলে ওর সামনে
ম্যাট্টিক পরীক্ষা তো তাই চিন্তায়
আছি।
-> ও আচ্ছা।
-> তুমি তো খোকা অনেক ভাল
ছাত্র, ওকে একটু পড়িয়ে দেখো
তো, কেমন?
আমার মাথায় তখন কী কাজ করছিল
কে জানে, সরাসরি 'হ্যা' বলে
দিলাম।
এরজন্য নিজের ওপর যারপরনাই
বিরক্ত হলাম। কিন্তু কী আর করা
কথা তো ফিরিয়ে নিতে পারি না।
.
একদিন সন্ধ্যায় নিশাতকে পড়াতে
গেলাম। ওর শোবার ঘরের পড়ার
টেবিলে মুখোমুখি বসে ঘরটাতে
ভালমত চোখ বুলিয়ে নিতে লাগলাম,
যদিও তার কোনো দরকার ছিল না।
জাস্ট কৌতূহল আর কী। মেয়েদের
ঘর যেমনি গোছানো হয় নিশাতের
ঘরও তেমন। ঘরের বিছানার
বেডশীটটা চমৎকার, একেবারে
আকাশের মত নীল রঙের, ঘরের
দেয়ালে হৃত্বিক রোশন থেকে শুরু
করে টম ক্রুজের ছবি পর্যন্ত আছে।
দেয়ালের একটি জায়গায় নিশাত
লিখে রেখেছে---এখানে আমিই বস।
ঘরটা দেখে বেশ ভাল লাগলো। আমি
ঘরের সাজসজ্জা থেকে দৃষ্টি
ফিরিয়ে এনে এবার টেবিলে
দৃষ্টিটাকে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা
করি। অযথাই একটা বলপয়েন্ট কলম
হাতে তুলে নিয়ে বলি, তাহলে
পড়াশোনা শুরু করা যাক?
-> ঠিক আছে।
-> কোন সাবজেক্ট তোমার সবচেয়ে
কঠিন মনে হয়?
-> ম্যাথ।
-> তুমি নিশ্চয় সায়েন্সে?
-> আপনি বুঝি জানেন না?
-> হুম জানি। এম্নি বললাম আর কী।
তা ম্যাথের মধ্যে বেশি কঠিন লাগে
কোনটা?
-> হাইয়ার ম্যাথ।
-> হুম। হাইয়ার ম্যাথের কোন অংক
বেশি জটিল লাগে?
নিশাত বিরক্ত হয়ে বলে, উফ, বড্ড
প্রশ্ন করতে পারেন আপনি।
আমি হাসতে হাসতে হাইয়ার ম্যাথ
সাবজেক্টটা হাতে তুলে নিই, বলি,
তাই না?
-> হুম।
আমি বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে
বলি, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি,
জ্যামিতি। শুরুতে বীজগণিত করব,
কেমন?
-> না, আগে ত্রিকোণমিতি।
-> ঠিক আছে, তাই হোক। বলো তো
ট্যারা লম্বা ভূত অর্থ কী?
-> ট্যান ইকুয়াল টু লম্ব ভাগ ভূমি।
-> গুড। ট্যান নাইনটি ডিগ্রীর মান
বলো।
সে বলতে পারল না। এরপর
বীজগণিতের একটা সূত্রও
জিজ্ঞেস করলাম, সেটাতেও ভাড়ে
মা ভবানী। আমার মনটা সামান্য
খারাপ হয়ে গেল। অংক আমার কাছে
প্রিয় সাবজেক্ট। যার আয়ত্তে
অংক নেই তাকে আমি বোকা বলে
ধরে নিই। নিশাত বোকা নয়।
তারমানে
সে অমনোযোগী। আমি কি পারব
তাকে ঠিকমত পড়াতে? প্রশ্নটা
নাগালের বাইরে থাকায় খানিকটা
বিভ্রান্ত হয়ে যায় আমি।
.
অবশ্য পরবর্তীতে এই বিভ্রান্তি
কেটে গেল যখন লক্ষ্য করি নিশাত
দ্রুত শিখতে পারে। তার এই গুণ দেখে
আমার মাঝে উৎসাহের সঞ্চার ঘটে।
আমি আগ্রহ নিয়ে তাকে পড়াতে
থাকি। একঘন্টা পড়ায়, এই
একঘন্টায় অবশ্য সে এদিক-ওদিক
করে পনের-বিশ মিনিট অযথাই নষ্ট
করে দেয়। যেমন সেদিন পড়ানোর
ফাঁকে তার মুঠোফোন বেজে ওঠে।
সে বলে, লিলির এসএমএস। আমার
বান্ধবী, একটু রিপ্লাই দিই প্লীজ।
-> পারমিশন চাইছ?
-> হুম।
আমি হেসে বলি, ঠিক আছে।
নিশাত রিপ্লাই দিতে দিতে হঠাৎ
খানিকটা হেসে ফেলে। হাসলে
মেয়েটার গালে টোল পড়ে। দেখতে
ভারী মিষ্টি লাগে তখন। সেদিন
রাতে
শুধুই তার টোল পড়া হাসিমুখটা
চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। এক
অন্যরকম শিহরণে রাতটা সেদিন
জেগেই কাটিয়ে দিই। বুঝতে পারি
একটু একটু করে আমি তার প্রতি
দুর্বল হচ্ছি। কিন্তু মনের ভাবটা
প্রকাশ করতে না পারায় নিজেই
নিজের কাছে অসহায় বনে যায়।
.
পরদিন বিকালে বাইরে থেকে
বাড়িতে
ফিরছিলাম, তখন দেখি রিকশায় করে
নিশাত আসছে। তার পাশে একটি
সমবয়সী ছেলে বসে আছে। দুজনের
হাতে দুটি চকবার। দুজনেই একে-
অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসছে। খুব
আপসেট হয়ে পড়েছিলাম দৃশ্যটি
দেখে। সন্ধ্যায় পড়াতে গিয়ে মুখটা
বিরস করে রাখি। নিশাতকে দুটা অংক
করতে দিয়েছি, সে অংক করার ফাঁকে
বলে, আপনি আজ আমাকে একটি
ছেলের সাথে দেখেছেন, তাই না?
-> হ্যা।
-> আপনি খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে
ছিলেন আমার দিকে। আসলে এতটা
অবাক হবার কিছু নেই, তাহসান
আমার শুধুই বন্ধু। এর বেশি কিছু না।
আমি লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলি,
লেখো, তুমি লেখো।
-> প্লীজ, বাবা-মাকে কিছু বলবেন না।
-> আমি আবার কী বলব? আজব!
নিশাত চুপচাপ লিখতে শুরু করে। আর
আমিও মনে মনে বিশ্বাস করে নিই
যে, নিশাতের জীবনে এখনো কেউ
আসেনি। কাজেই আমি এন্ট্রি নিতে
পারি।
.
পড়ানো শেষ করে ছাদে এসে
দাঁড়িয়েছি। আকাশে আজ চাঁদ নেই
তাই অগণিত তারার মাঝে দৃষ্টি
মেলে
রেখেছি। সেইসাথে মনে মনে
নিশাতকে কীভাবে প্রেম নিবেদন
করব তা ঝালাই করে নিতে থাকি।
সেসময় খুব মিস করছিলাম
নিশাতকে। আহা, সে যদি পাশে
থাকতো এসময়। পরক্ষণে এই ভেবে
নিজেকে স্বান্তনা দিলাম যে, আজ
দেখা হয়নি তো কী হয়েছে কাল
পড়াবার সময় তো দেখা হবে। কিন্তু
না, আমার ভাবনার সাথে বাস্তবতা
প্রতারণা করলো। পরদিনই জানতে
পারি নিশাত একটা ছেলের সাথে
পালিয়ে গেছে। নিশাতের মায়ের
আহাজারি দেখে আমি ব্যস্ত হয়ে
শহরের বুকে তাকে খুঁজতে বের হই।
কিন্তু সে লাপাত্তাই থেকে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তাহসান
নামের ছেলেটির সাথেই সে
পালিয়েছে।
.
আমি ভাবতাম আমার মাঝে আবেগ
কম, সহজে দুঃখ-কষ্ট পাই না। এটা
যে কত বড় ভুল ধারণা তা নিশাতের
পালিয়ে যাওয়াতেই প্রমাণ হল। আজ
আমি বড্ড ভেঙে পড়েছি। মনটাকে
শক্ত রাখতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে
যায়
বারবার। কোনোদিকে এখন আর
মনোযোগও নেই। বাড়ি থেকে বিয়ের
জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আমি
নির্বিকার। ভাবছি, বিয়ে নামক
সামাজিক প্রথাটি এড়িয়ে যাব।
কষ্টের স্বাদ নিয়েই বেঁচে থাকব।
কষ্টই হোক আজ আমার
নিত্যসঙ্গী।
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  U4GM - Guide: Understanding the Value of Fallout 76 Items vs. Fallout 76 Caps in the Emberly 0 144 06-11-2025, 03:45 PM
Last Post: Emberly
  MonopolyGoStickers - How to Organize and Track Your Monopoly Go Stickers Collection Emberly 0 249 04-21-2025, 03:46 PM
Last Post: Emberly
  একটি না পাওয়া ভালোবাসার সমাপ্তি Abir 15 7,803 01-31-2025, 06:02 PM
Last Post: atlas77
  [গল্প] একটা গল্প হতে পারত Abir 0 2,175 01-02-2018, 04:39 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] তাসনিম লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে ছেলেটাকে Abir 0 2,698 01-02-2018, 04:36 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] ছোবল Abir 0 2,275 01-02-2018, 04:34 PM
Last Post: Abir
  অজানা এক অনুভূতি লিখা: ইচ্ছে ঘুড়ি Abir 0 2,323 01-02-2018, 04:33 PM
Last Post: Abir
  লাভ ডায়রি: যে ভালোবাসায় হার মেনে যায় সব দুরত্ব Hasan 0 2,282 08-29-2017, 04:17 PM
Last Post: Hasan
  [Exclusive] ভালোবাসা অমর হয়ে রয় মোঃ আলমামুন আলম আরজু 0 2,355 03-09-2017, 11:09 AM
Last Post: মোঃ আলমামুন আলম আরজু
  গল্প: আমি নিষ্ঠুর, আমি পাষণ্ড Hasan 0 2,423 02-22-2017, 11:24 AM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)