Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

গল্প : কল্পনা বিলাস।

Googleplus Pint
#1
আমি চুপচাপ বসে আছি।
জায়গাটা বিয়ের আসর। প্রিয়তি নামের
একটা অনিন্যসুন্দর মেয়ে আজ জীবনের নতুন
একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
আমি বসে আছি প্রিয়তির সামনে। প্রিয়তির
মাথায় ঘোমটা, ঘোমটার সামনে দিয়ে
টিকলির এক অংশ বাইরে বেরিয়ে পড়েছে।
প্রিয়তির মুখখানি ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না।
তার হাতে কাঁচের চুড়ি রিনিঝিনি মাদকতা
ছড়াচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
আমি না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম প্রিয়তির
চোখে পানি। ওর সমুদ্রের মত গভীর চোখে দু
ফোঁটা বিশুদ্ধ অশ্রু। আমার খুব জিজ্ঞেস
করতে ইচ্ছা করছে, "অ্যাই শোন, বিয়ের
আসরে মেয়েরা কাঁদে কেন বল তো?"
আমার মাথায় টোপর। গায়ে সাদা
পাঞ্জাবী। নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য
আমি একটু পরপরই হেসে উঠছি। আমার
একগাদা নিকটসম্পর্কীয় ও দূরসম্পর্কীয় হবু
শ্যালিকারা মাঝে মাঝে কটমট করে
তাকাচ্ছে। তাদের দৃষ্টি অনুভূতিহীন। দেখে
মনে হয় একটু আগেও কেঁদেছে তারা, এখন মন
শক্ত করছে।
কি রে ভাই? এ কোন বাড়িতে বিয়ে করতে
আসলাম? সব কাঁদুনির দল! বিয়ের পর তো
জ্বালিয়ে খাবে দেখছি!
শাহেদ গম্ভীর মুখে হাঁটাহাঁটি করছে। তার
চোখ লাল, খুব গভীরভাবে কিছু একটা ভাবছে
সে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, শাহেদের
পরনেও সাদা পাঞ্জাবী। ও তো অন্য কিছু
পরে ছিল, চেঞ্জ করল কখন?
প্রিয়তি মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। আমি
ভাবছি। আজ থেকে তিন বছর আগে প্রিয়তির
সাথে আমার প্রথম দেখা। প্রকৃতি এই ক্ষুদ্র
নাটকটি মঞ্চস্থ করেছিল অনেকটা দুর্ঘটনার
মত করে।
টিএসসি ক্যাম্পাসে আমি আর প্রিয়তি। কেউ
কাউকে চিনি না। হঠাৎ চোখাচোখি।
একবার। দুবার। তিনবার।
মেয়েদের সাথে চোখাচোখি হলে
ছেলেদেরই নামিয়ে নেওয়ার নিয়ম। জীবনে
গত বাইশটি বছর নিষ্ঠার সাথে নিয়মটি
মেনে আসলেও, সেদিন মানতে পারলাম না।
তাকিয়ে রইলাম। প্রিয়তিও কি একটা
অজ্ঞাত কারণে চোখ নামাতে পারল না। ও
বোধহয় ভুলেই গেছে কোন ছেলে তাকিয়ে
থাকলে মেয়েদেরই একসময় চোখ নামিয়ে
নিতে হয়।
ফলাফলে যা হবার তাই হল। আমরা জুটি হয়ে
চুটিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। প্রথম
পরিচয়ের আড়াই বছর পরে এক সুন্দর বিকেলে
বাদাম খেতে খেতে আমরা পরস্পরের
জীবনসঙ্গী হতে রাজি হয়ে গেলাম।
আমি প্রিয়তির ছবি মায়ের কোলে ছুঁড়ে
ফেলে বললাম, এই মেয়েকে তোমার পুত্রবধূ
করতে চাই।
মা প্রথমে ছেলের এহেন কর্মকাণ্ডে ঈষৎ
রাগান্বিত, অতঃপর আনন্দিত এবং অতঃপর
উত্তেজিত হয়ে সাথে সাথে রাজি হয়ে
গেলেন। হবেন নাই বা কেন? এই ছবিটির
মেয়ের মত সুন্দর মেয়ে যে উনি জীবনে
দেখেন নি এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে
পারি।
দুইপক্ষ রাজি হল। এনগেজমেন্ট নামক একটা
অর্থহীন সামাজিকতা আমাকে পালন করতে
হল অনেকটা প্রিয়তির অনুরোধেই। তার সব
বান্ধবীর নাকি এনগেজমেন্ট করে বিয়ে
হয়েছে, সে-ই বা কি দোষ করল!
বিয়ের দিন ধার্য হল। মুরুব্বিরা শুভদিন দেখে
বিয়ের দিন ঠিক করলেন। অফিসের কাজে
আমি আর বন্ধু কাম কলিগ শাহেদ চট্টগ্রাম
গিয়েছিলাম, আগের দিন বাস না পেয়ে আজই
দুপুরের বাসে উঠলাম। রাতে বিয়ে।
ঠিক সেই মুহূর্তে প্রকৃতির আবার আমায় নিয়ে
খেলতে ইচ্ছা হল। আমাদের বাস এক্সিডেন্ট
করল। তেমন কিছু না, আটত্রিশজনের মধ্যে
দশজন মাত্র আহত, হাসপাতালে নেবার পথে
একজন শুধু নিহত। তেমন কিছু না।
ঢাকা-চিটাগং হাইওয়েতে সামান্য একটা
এক্সিডেন্ট প্রিয়তির বিয়েতে কোনরূপ
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হল।
প্রিয়তির হাতে শোভা পেতে লাগল আগে
থেকে কিনে রাখা কাঁচের রিনিঝিনি চুড়ি,
হবুবধূর নির্দিষ্ট আসনে শোভা পেতে লাগল
প্রিয়তি নিজেই।
শাহেদের চোখ ভয়াবহ লাল। তাকে জোর
করে আমার পাশে বসানো হয়েছে। শাহেদ
মাঝে মাঝে পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে চোখ
মুছছে। আরে গাধা, কাঁদবে তো তোর হবু
ভাবী, তুই কাঁদবি ক্যান?
একটু পরে টুপিঅলা কাজি সাহেব এলেন।
কাজি সাহেবের গা দিয়ে আতরের ভুরভুর গন্ধ
বেরুচ্ছে। কাজি সাহেবের রেট কত জানা হয়
নি। জানতে হবে। একদিন গভীর রাতে চমকে
দিয়ে বলতে হবে, "আইজুদ্দিন, তোমার রেট
কত?"
কাজি সাহেব প্রিয়তির পাশে বসেছেন।
প্রিয়তিকে কিছু একটা বলা হচ্ছে। সে মাথা
নিচু করে শুনছে। তার কোলের উপর তার
চোখের গভীর আকাশ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়
বৃষ্টি ঝরছে।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, "প্রিয়তি কবুল
বল। কবুল বল"।
প্রিয়তির গলা থেকে চি চি করে আওয়াজ
বেরুল। কবুল। কাজি সাহেব প্রটোকলধারী
মানুষ, প্রটোকল মেনেই বললেন, মা, শুনতে
পাই না। বয়স হইছে তো। আবার বলেন, কবুল?
প্রিয়তি আবার চি চি করে কিছু একটা বলে
উঠল। একটু পরে আবারও। মেয়েরা তাকে
সান্ত্বনা দিচ্ছে। আরে ব্যাটা সান্ত্বনা
দেবার কি আছে, বাহবা দে।
কাজি সাহেব এবার আমার দিকে আসছেন।
এই রে, শাহেদ আবার টোপর পড়ল কখন? গাধা,
বিয়ের দিন বর ছাড়া কেউ টোপর পরে? গাধা
একটা। এইজন্যেই গাধাটার বিয়ে হয় না।
কাজি সাহেব শাহেদের দিকে এগিয়ে
যাচ্ছেন। শাহেদ শব্দ করে শিশুর মত কাঁদছে।
আমি আস্তে করে কাজি সাহেবের জন্য
জায়গা ছেড়ে দিলাম। ঢাকা-চিটাগং
রোডের একমাত্র নিহত ব্যক্তি ছিলাম আমি।
পৃথিবীর জায়গাগুলো শুধু জীবিত ব্যক্তিদের
জন্য। মৃত ব্যক্তিদের জন্য কোন জায়গা নেই।
মৃত্যুদূতের কাছ থেকে চেয়ে নেয়া সময়
ফুরিয়ে গেছে। শেষ হয়েছে আমার শেষ
কল্পনাবিলাস। আমি মিলিয়ে যাচ্ছি শূন্যে।
প্রিয়তি কাঁদছে। শাহেদ কাঁদছে। প্রিয়তি
আর শাহেদের সোনালী ভবিষ্যতে
স্যান্ডউইচড হয়ে বসে গেছি আমি। আমার
কথা ভেবে এই অদ্ভুত সুন্দর জুটি বিয়ের প্রথম
কয়েক বছর কষ্ট পাবে, এই ভেবে কেমন একটা
বুক এফোঁড় ওফোঁড় করা কষ্ট পাচ্ছি আমি
নিজেই।
তবে, সময় যেমন ফুরায়, কান্নাও তেমনি।
ফুরিয়ে যায়। যাক ফুরিয়ে। শাহেদ আর
প্রিয়তি সুখে থাক। শান্তিতে থাক। তারা
কারো জন্য চোখের জল না ফেলুক। তারা
কারো কথা ভেবে কষ্ট না পাক। তাদের
অ্যানিভার্সারি নিছক কাকতালীয় ভাবে
অগুরুত্বপূর্ণ কারো মৃত্যুদিবসের সাথে মিলে
গেছে বলে সেদিন তারা ভালোবাসার
উৎসবে মত্ত হতে সংকোচ বোধ না করুক।
তাদের সন্তান গভীর রাতে আকাশের দিকে
তাকিয়ে নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট কোন
তারাকে তাদের অদেখা আঙ্কেল না ভাবুক।
গভীর আগ্রহে আকাশের দিকে তাকিয়ে
জিজ্ঞেস না করুক, "আঙ্কেল আঙ্কেল, দূরের
দেশে কেমন আছো তুমি?"
.
লিখেছেন : Ahsan Bin Rakib
Repost:হেমন্তে বর্ষায় আমি
Hasan
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  একটি না পাওয়া ভালোবাসার সমাপ্তি Abir 14 4,988 01-11-2024, 03:42 AM
Last Post: Jennifer
  [গল্প] একটা গল্প হতে পারত Abir 0 1,894 01-02-2018, 04:39 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] তাসনিম লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে ছেলেটাকে Abir 0 2,400 01-02-2018, 04:36 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] ছোবল Abir 0 1,983 01-02-2018, 04:34 PM
Last Post: Abir
  অজানা এক অনুভূতি লিখা: ইচ্ছে ঘুড়ি Abir 0 2,031 01-02-2018, 04:33 PM
Last Post: Abir
  লাভ ডায়রি: যে ভালোবাসায় হার মেনে যায় সব দুরত্ব Hasan 0 1,982 08-29-2017, 04:17 PM
Last Post: Hasan
  [Exclusive] ভালোবাসা অমর হয়ে রয় মোঃ আলমামুন আলম আরজু 0 2,078 03-09-2017, 11:09 AM
Last Post: মোঃ আলমামুন আলম আরজু
  গল্পঃ প্রেম নেই Hasan 0 2,533 03-01-2017, 06:48 PM
Last Post: Hasan
  গল্প: আমি নিষ্ঠুর, আমি পাষণ্ড Hasan 0 2,157 02-22-2017, 11:24 AM
Last Post: Hasan
  ভাল লাগায় মোড়ানো ভালবাসা Hasan 0 2,714 02-22-2017, 11:23 AM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)