Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

----পকেটমার তিলোত্তমা---------

Googleplus Pint
#1
ঢাকা শহরের প্রত্যেকটা অলিগলি,ইট পাথর, ধুলি কণা,
রাস্তাঘাট,দুষিত বায়ু,এমনকি ফুটপাতের ময়লা আবর্জনা
পর্যন্ত সবকিছুই আমার বেশ সুপরিচিত।শুধু তাই নয় এই ঢাকা
শহরে যতগুলো জেলখানা আছে সব ক'টাতে অন্তত একবার
করে হলেও আমার ভাত খাওয়া হয়ে গেছে।পকেট মেরে যদি
কোনোসময় ধরা পড়ি তাহলে দু' চার বার জেল খেটে আবার
একই কাজ শুরু করি।জেল খাটতে খাটতে এতটাই ছেঁচড়া হয়ে
গেছি যে পুলিশ এখন আমাকে দেখলেও না দেখার ভান করে
থাকে।
---তোমার নাম???
.
নাম তিলোত্তমা।কে আমার নাম রেখেছিল বা কিভাবে
তিলোত্তমা হলাম সেটা জানিনা নিজেই।আমার মা কে,বাবা
কে,সেটা জানাও হয়নি আজ পর্যন্ত।
আমার জ্ঞ্যান হবার পর থেকেই নিজেকে ফুটপাতে আবিষ্কার
করেছি।
শুধু এইটুকু মনে আছে,যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন ক্ষুদা
লাগলে খাবারের সন্ধানে কোনো ডাস্টবিনে চলে যেতাম,
ওখানে বিনা পয়সায় বাসি পঁচা অনেক খাবার পাওয়া যায়।আর
রাত হলে ফুটপাতে ঘুমাতাম।পথে পথে ঠোকর খেয়ে বড় হয়েছি।
একসময় কোনো এক দলের হয়ে পকেট মারার কাজ করতাম।
তাতে নিজেকে অপরাধি লাগে।কিন্তু এখন আমি কোনো দলের
নই।এখন পেটের তাগিদে করি।ঠিক আমার যতটুকু প্রয়জন।এখন
এক বস্তিতে থাকি। পকেটমার হিসেবে এতটাই পরিচিতি লাভ
করেছি যে মানুষ আমাকে দেখলেই ভয়ে নিজেদের মানিব্যাগ
চেপে ধরে দৌড়ে পালায়।আমার কাজের অভিজ্ঞতা দেখে অনেক
বড় বড় অপরাধ চক্র তাদের সাথে ভেড়াতে চেয়েছিল।কিন্তু
রাজি হয়নি স্বাধীন থাকবো বলে।
আমার গায়ে যে জিন্স আর, জেকেট দেখতে পাচ্ছেন,শীত অথবা
গ্রীষ্ম ১২ মাসই এই পোশাক আমার গায়ে থাকে।
...
কথাগুলো বলছিলাম হিমেলকে,পকেট মারতে গিয়ে যখন তার
হাতে ধরা পড়ি তখন আমার দিকে প্রায় আধঘণ্টা এক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে ছিল এই ছেলেটা। এর আগে হয়তো কোনোদিনও মেয়ে
পকেটমার দেখেনি সে।অনেক অনুরোধ করে বলেছিলেন প্লিজ
আপনার সম্পর্কে খুব জানতে ইচ্ছে করছে।আমার প্রতি উনার
কৌতুহল দেখে নিজেই সবকিছু খুলে বললাম।একটা পার্কে বসে
নিজের জীবন বৃত্তান্ত পুরোটাই শোনালাম ছেলেটাকে।
.
আমার কথা গুলো শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আমার
দিকে।এতটাই অবাক যে তার অবাক হওয়ার ভারে চোখের
চশমাটা নাকের প্রায় কাছে হেলে পড়েছে।আবার জিজ্ঞেস
করলো তুমি কখনো ইভটিজিং এর স্বীকার হওনা!!
----আমিও সাথে সাথে উত্তর দিলাম ইভটিজিং করবে কি,
আমাকে দেখলেই তো ছেলেরা নিজেদের মানিব্যাগ সামলাতে
ব্যাস্ত থাকে।
অনেক্ষণ হয়ে গেলো দুজনে বসে কথা বলছি।এর মধ্যে সে
নিজের নামটাও বললো।ভার্সিটিতে পড়াশুনা করছে এটাও
বললো।
আমি উঠতে যাবো এমন সময় বলে উঠলো
--------তোমার মোবাইল নেই?? নাম্বারটা দেবে প্লিজ??
-----আছে,এটাও পকেট মেরেছি।কেনো??
----- মাঝেমধ্যে কথা বলবো...
আমিও নাম্বার দিয়ে দিলাম কি বুঝে,আসার সময় তার
মানিব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো এটা নিয়ে যাও
কিন্তু নিলামনা।পকেটমারা আর আপনি নিজে থেকে দেয়া
আলাদা ব্যাপার।আমি কারো দয়া নিতে চাইনা।কথাটা বলেই
চলে আসলাম ওখান থেকে।হিমেল ওখানে দাঁড়িয়েই আমি
যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।আমি কিছুদুর
আসার পর চিৎকার করে বললো এসব পোশাক ছেড়ে দাও।
একটা নীল শাড়ি আর চোখে কাজল দিয়ে খোলা চুলে আয়নার
সামনে নিজেকে দেখো।দেখবে ঠিক পরীর মতো দেখাচ্ছে।
.
কথাটা শুনেই দাঁড়িয়ে পরলাম। পেছন ফিরে তাকিয়ে রইলাম তার
দিকে।এতক্ষণে বোধহয় এটাই আবিষ্কার করছিল সে।নিজেকে
কেমন যেন দুর্বল মনে হলো তার প্রতি।।এর আগে কারো
হাতে ধরা পড়লে দু'চারটে কিল ঘুষি দিয়ে পালানোর চেষ্টা
করতাম।কিন্তু এই ছেলেটা কিভাবে আমার সব কথা জেনে নিল।
পালানোর আদেও চেষ্টা করিনি।
আজকের দিনটাই খারাপ।বস্তিতে ফিরে হাত মুখে ধুয়ে কিছু
খেতে যাবো এমন সময় মোবাইলে ফোন। ওপাশ থেকে একটা
ছেলের কন্ঠস্বর ভেসে এলো,।
----কাল একটু আসতে পারবে!
----কে বলছেন!!
---- আমি হিমেল। কাল আর একবার আসবে পার্কে?
-----কেনো??
-----এসো, নীল শাড়ি পড়বে।আর চোখে ভালো করে কাজল
দেবে।
----- পারবোনা, আমার কি আর কাজ নেই,যত্তসব।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে একপ্রকার
জোর করেই বললাম কথাটা।একটু পর ফোনে মেসেজ এলো।
তুমি আসবে কিনা সেটা তোমার ব্যাপার।কিন্তু আমি
অপেক্ষায় থাকবো।
.
মনকে মানাতে পারিনি।অবশেষে দেখাই করেছি। এতটাই দুর্বল
হয়ে পড়েছি ওর উপর যে না গিয়ে পারিনি।ওর কথা মতোই নীল
শাড়ি পড়েছিলাম।ওর কথা রাখতে জীবনে প্রথমবার শাড়ি
পরেছি।শাড়ির কুঁচিগুলো সামলানো খুব কষ্ট স্বাধ্য ছিল।মনে
হলো কোনো বিশ্বযুদ্ধ চালাচ্ছি। লাইফে প্রথমবার নিজেকে
মেয়ে মানুষ বলে মনে হলো। নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে হলো খুব।
হিমেলের কথা মতোই পার্কে গিয়েছিলাম।
গিয়ে দেখি হিমেল আমার আগেই উপস্থিত হয়েছে। আমাকে
দেখে বললো আমার বিশ্বাস ছিল তুমি আসবে।আমি একটু
কঠিন হয়ে বললাম কেনো ডেকেছো বলো!!
হিমেল আমার দিকে তাকাতেই লক্ষ করলো আমি এক হাতে
শাড়ির কুঁচি ধরে আছি।তা দেখেই ও হাঁসতে হাঁসতে বললো এটা
কি?
--- আমি কিছুটা হতাশ হয়ে বললাম লাইফে ফার্স্ট টাইম
শাড়ি পরেছি তাই।
আবারও বললাম কেনো ডেকেছো!!
সাথে সাথেই হিমেল উত্তর দিলো,যদি কিছু মনে না করো
তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে
করতে চাই, এখনই।
----- মানুষ আগে প্রেমের প্রস্তাব দেয়,তুমি বিয়ের প্রস্তাব
দিলে।
----- প্রেম করলে তো আর বিয়ে করার আগ্রহ থাকেনা।তাই
একেবারে বিয়েই করতে চাই।
----- আমি তো পকেটমার।
----- তাতে কি,বিয়ের পরেও পকেট
মারবে। তবে অন্য কারো নয়।শুধু আমার।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমিও আর না করতে পারিনি।
.
দুই দিন পর...
কাজি অফিসে দুজনের বিয়ে সমপন্ন হবার পর হিমেল
মানিব্যাগটা নেওয়ার জন্য নিজের পকেটে হাত দিতেই অবাক
হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।পকেট কখালি দেখে
বললো আমার মানিব্যাগ কোথায়?
----আমি মুচকি হেঁসে বললাম ওটা আমি মেরে দিয়েছি।
আমার কথা শুনে হিমেলও হাঁসলো,দু'জন দুজনের দিকে তাকিয়ে
হাঁসতে লাগলাম। আমাদের কান্ড দেখে কাজি সাহেব একটূ কাশি
দিয়ে বললেন, বাবাজি টাকাটা.!!!!
উনার কথায় দুজনের ঘোর কাটে।
কাজি অফিস থেকে বের হয়ে, দু'জন দুজনের হাত শক্ত করে
ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।এখানেই মৃত্যু হলো পকেটমার
তিলোত্তমার। নতুন এক জীবন শুরু করতে যাচ্ছি দুজনে।
যেখানে থাকবে শুধু সুখ আর ভালোবাসা।
.
------- সমাপ্ত-------
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  একটি না পাওয়া ভালোবাসার সমাপ্তি Abir 14 4,916 01-11-2024, 03:42 AM
Last Post: Jennifer
  [গল্প] একটা গল্প হতে পারত Abir 0 1,889 01-02-2018, 04:39 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] তাসনিম লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে ছেলেটাকে Abir 0 2,393 01-02-2018, 04:36 PM
Last Post: Abir
  [গল্প] ছোবল Abir 0 1,976 01-02-2018, 04:34 PM
Last Post: Abir
  অজানা এক অনুভূতি লিখা: ইচ্ছে ঘুড়ি Abir 0 2,024 01-02-2018, 04:33 PM
Last Post: Abir
  লাভ ডায়রি: যে ভালোবাসায় হার মেনে যায় সব দুরত্ব Hasan 0 1,975 08-29-2017, 04:17 PM
Last Post: Hasan
  [Exclusive] ভালোবাসা অমর হয়ে রয় মোঃ আলমামুন আলম আরজু 0 2,074 03-09-2017, 11:09 AM
Last Post: মোঃ আলমামুন আলম আরজু
  গল্পঃ প্রেম নেই Hasan 0 2,523 03-01-2017, 06:48 PM
Last Post: Hasan
  গল্প: আমি নিষ্ঠুর, আমি পাষণ্ড Hasan 0 2,146 02-22-2017, 11:24 AM
Last Post: Hasan
  ভাল লাগায় মোড়ানো ভালবাসা Hasan 0 2,702 02-22-2017, 11:23 AM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 4 Guest(s)