Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5

এক মিনিটের গল্প - শেষ অশ্রু

Googleplus Pint
#1
বাইরে প্রচন্ড হিমশীতল ঠান্ডা। এমন ঠাণ্ডা আগে আর কখনো পড়েনি। অফিসে প্রবেশের মুখে হতদরিদ্র একটি মেয়ে ফুলের তোড়া বিক্রী করে। বয়স দশ অথবা এগারো।মেয়েটির সাথে আরো কয়েকজন। কিন্তু নাম না জানা এ মেয়েটি একেবারে নাছোড়বান্দা।প্রতিদিন আমার গাড়ী পর্যন্ত আসে।কাকুতি মিনতি করে, একসময় ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। আমি দেখেও না দেখার ভান করি।মেয়েটির শত অনুনয় আমার হৃদয় স্পর্শ করেনা।



একদিন প্রচন্ড জ্যামে আটকে আছি। আজ নিশ্চিত অফিস দেরি হয়ে যাবে। কোনোরকমে গাড়ি পার্ক করে, দ্রুত গতিতে হেঁটে আসছি। দেখি সেই নাছোড়বান্দা ফুলওয়ালা মেয়েটি।



স্যার একটা ফুল নেন। একটা ফুল নেন না গো স্যার। আপনার পায়ে ধরি। বলতে বলতে দেখি, মেয়েটি আমার পলিশ করা জুতোয় নখের আঁচড় লাগিয়ে দিয়েছে।আমার ইচ্ছে করে, মেয়েটির গালে প্রচন্ড জোরে একটা চড় বসিয়ে দেই। এই সব ছোটলোক ইতর শ্রেণীর মানুষের কাছে যে পরিচ্ছন্নতা আর সময়ের কোনো মূল্য নেই।



প্রায় এক মাসের ছুটি কাটাতে আমি আটলান্টা আসি। নির্ধূম আনন্দে কীভাবে যে একমাস কেটে গেলো টেরই পেলাম না।স্মৃতির আঁজলায় সুখ বন্দী করে ফিরে আসি সেই পুরনো অফিসে। দেখি, সেই ছেলেমেয়েরা আজো ফুলের পসরা নিয়ে বসে আছে। আমি ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাই।



কয়েকজন খুব অনুনয় করে- ফুল কিনবেন স্যার? একেবারে তাজা লাল, সুগন্ধী ফুল।



কিন্তু আগের সেই মেয়েটির যেন আমার প্রতি অথবা ওর ফুল বিক্রির প্রতি আর তেমন কোনো আগ্রহ নেই।কেমন যেন অবহেলা। পুরো সপ্তাহটাই এভাবে গেলো। ভাবলাম ,হয়তোবা মেয়েটির পারসোনালিটি গ্রু করেছে। আমি নিজের মতো কাজে ডুবে যাই।



কিছুদিন পর আমার কৌতূহল হলো । কথা বলার লোভ সামলাতে পারলামনা। কাছে গিয়ে বললাম-আচ্ছা বলতো ,তুমি আর আমার কাছে আগের মতো ফুল বিক্রির চেষ্টা করোনা। কী ব্যাপার?



মেয়েটি কেমন যেন উদাস। কী এক নিদারুণ অবহেলায় হেঁয়ালী দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সাজানো ফুলের তোড়াগুলোর দিকে। আমার পাণে মুখ তোলে থাকালে যেন ওর ধ্যানের ব্যাঘাত ঘটবে।



আমার আগ্রহ এতে আরো বাড়ে।



অনেক পীড়াপিড়িতে বলে, গত ছ মাস যাবত আমার মা অসুস্থ। হাসপাতালে শুয়ে আছে। বাবা অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ভাই আর আমি শেষরাতে ওঠে ফুলের মালা আর ফুলের তোড়া বানাই। আর আমি তা বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসার টাকা জমাই। আমাদের একসময় বড় বেশী টাকার দরকার ছিলো স্যার।



আমি বললাম , ছিলো মানে কি ?এখন বুঝি আর টাকার দরকার নেই।

মেয়েটি এবার ডুকরে কেঁদে ওঠে। কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে -আছে। তবে এতো বেশীর আর দরকার নেই।



আমার মা -গত সপ্তাহে আমাকে আর আমার ভাইকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গিয়ে উনি নিজেই এখন এক অদেখা বাগানের ফুল হয়ে গেছেন। এখন চাইলে আমি আপনাকে একবারে মুফতই ফুলের তোড়া দিতে পারি। কোনো টাকা দিতে হবেনা। কেউ নিলে ভালো,আর যদি সব বিক্রি নাও হয়,তাও ভালো। আমি বাড়ি ফিরার পথে বিক্রি না হওয়া ফুলগুলো প্রতিদিন আমার মায়ের কবরে রেখে দিয়ে শূণ্য ঘরে চলে যাই।
Reply


Possibly Related Threads…
Thread Author Replies Views Last Post
  অপূর্নতা Hasan 0 1,806 02-22-2017, 11:23 AM
Last Post: Hasan
  মাঝেমাঝে ভালোবাসা হয়ে যায় অর্থহীন, বিক্রি হয়ে যায় স্বার্থের কাছে । Hasan 0 1,881 02-22-2017, 12:23 AM
Last Post: Hasan
  শেষ বয়সে Hasan 0 1,732 02-22-2017, 12:23 AM
Last Post: Hasan
  #ভাষা_দিবসের_গল্প Hasan 0 1,589 02-22-2017, 12:20 AM
Last Post: Hasan
  অসুস্থ মেয়ের প্রতি ভালোবাসায় জরিয়ে পড়লো ছেলেটি অতঃপর Hasan 0 2,219 02-21-2017, 08:57 PM
Last Post: Hasan
  ‘একজন খারাপ বাবার চিঠি’ Hasan 0 1,808 01-10-2017, 03:40 PM
Last Post: Hasan
  তুমি আর কিসারেট (সিগারেট) খাবানা।ডক্টর আঙ্কেল বলে সিগ্রারেট খেলে ক্যান্সার হয়। Hasan 0 2,113 01-10-2017, 03:40 PM
Last Post: Hasan
  একজন পতিতার গল্প Hasan 0 1,716 01-10-2017, 03:39 PM
Last Post: Hasan
  ট্রেন স্টেশনের সেই মেয়েটি Hasan 0 1,733 01-10-2017, 03:18 PM
Last Post: Hasan

Forum Jump:


Users browsing this thread: 1 Guest(s)